১৫ বছরেও চালু হয়নি নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা হাসপাতাল

অদ্বৈত কুমার আকাশ 
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২১ ১১:১৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২১ বার।

অবকাঠামো নির্মানের প্রায় ১৫ বছরেও জনবলের অভাবে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরে ২০ শয্যা সরকারি হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। জনবল নিয়োগ না দিয়েই তড়িঘরি করে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ আছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই হাসপাতালটি এখনও চালু না হওয়ায় তা এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছে না। 

স্থানীয়রা হাসপাতালটির এ অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলকেই দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, জনবল নিয়োগ না দিয়েই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে বিগত বিএনপি সরকার আমলে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি লোক দেখানো উদ্বোধন করা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপি সরকার আমলের প্রকল্প হওয়ায় দলীয় সংকীর্ণতা থেকে আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালটিতে জনবল নিয়োগ দিচ্ছেনা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের চারটি ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এতে ফাটল ধরেছে। নির্মাণকাজে ত্রুটির কারণে ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পরেছে। ময়লা আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ণ হাসপাতালের লোহার গ্রিল, জানালা, দরজা ও কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না থাকায় নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালে মূল্যবান আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি। এছাড়া হাসপাতালটিতে নেই পানি ও নিরাপত্তার জন্য নৈশপ্রহরী। এজন্য মাদক সেবিদের আস্তানা হয়েছে সেখানে।

এছাড়া হাসপাতালের প্রধান ফটক ও ষ্টোর রুম ছাড়া সব কক্ষে তালা ঝুলছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন  হাসপাতালটি কবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে?  কবে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে? এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী জরুরী ভিত্তিতে যেন এই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম চালু করা হয়।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দুরে ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশেপাশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। একারনে উপজেলা সদরে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মানের দাবি তোলেন স্থানীয়রা। এ দাবির প্রেক্ষিতে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিগত বিএনপি সরকার আমলে উপজেলা সদরে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

তৎকালীন সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ববধানে (নির্মাণ ও রক্ষাবেক্ষন ইউনিট-সিএমএমইউ) হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুসাঙ্গিক খাতে ব্যায় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০২ সালে সাবেক  প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যোষ্ঠপুত্র তারেক রহমান হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। 

হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আটকে যায়। জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহুর্তে তড়িঘরি করে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ডা.জিয়াউল হক মোল্লা। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছরে জনবলের অভাবে হাসপাতালটি আর চালু হয়নি। 

হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ১জন মেডিকেল অফিসার ও ১জন মেডিকেল এ্যাসিষ্টেন্টকে নিয়ে হাসপাতালের আউট ডোর চালু রাখা হয়েছে। তবে ২০ শয্যা অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা সহকারি, ঔষধবিদ, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারি, ল্যাব এটেনডেন্টসহ ১৩ জনের পদ রয়েছে। 

হাসপাতালের বারান্দায় প্রধান ফটকের পাশে একটি কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাঃ শান্তা ফ্লোরিন তৃষা। তিনি জানান, এখানে ১জন মেডিকেল অফিসার ও ১জন মেডিকেল এ্যাসিষ্টেন্ট রয়েছেন। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি আরো বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিজরুল যেতে হয়। তখন হাসপাতাল বন্ধ থাকে এতে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

চিকিৎসা নিতে আসা দলগাছা গ্রামের রেহেনা বেগম বলেন, গরীব মানুষ টাকার অভাবে বগুড়া যেতে পারিনা। ওষুধ কিনতে পারছিনা। তাই এই হাসপাতালে এসেছি। উপজেলার বৈলগ্রামের আলেফা বেগম বলেন, আমার মেলা সমস্যা বাবা। এখানে সাদা সাদা বড়ি ছাড়া অন্য কিছুই দিলনা। পৌর এলাকার কুবির সরকার জানান, হাসপাতাল বেশিরভাগ সময় বন্ধ দেখি। বড় কোন সমস্যার সমাধান এখানে হয় না।

নন্দীগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুনিরুজ্জামান বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ এখানে নষ্ট হচ্ছে। এ হাসপাতাল নিয়ে আমরা লেখালেখি করেছি কিন্তু কোন কাজে আসেনি। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী জরুরী ভিত্তিতে যেন এই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম চালু করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবার স্বার্থে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি পূর্নাঙ্গভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসক এখানে এসেছিল। আমরা তাকে বিষয়টি বলেছি। 

পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ভিতর ঘাস লতা পাতায় দিয়ে জঙ্গল হয়েছিল। আমি লোক দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়েছি। এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবার স্বার্থে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি পূর্নাঙ্গভাবে চালুর করার জন্য আমরা প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নহ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই হাসপাতালটি অতিদ্রুত চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত বলেন, জেলা প্রশাসক মহাদয় হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালটিকে পূর্নাঙ্গভাবে চালু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, জনবলের অভাবে ওই হাসপাতালটি পূর্নাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তবে পূর্নাঙ্গভাবে চালুর প্রক্রিয়া চলছে।