করোনার সংক্রমণঃ ভারতীয় সীমান্তবর্তী নওগাঁ ও জয়পুরহাট ভয় জাগাচ্ছে বগুড়ায়

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১ ০৬:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২০৮ বার।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলো বিশেষত নওগাঁ ও জয়পুরহাট থেকে চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে লোকজনদের আসা-যাওয়ার কারণে বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু আবার বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন ৪২জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ৩টি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাও দ্রুত কমে আসছে।

 
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের হার ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ হলেও  সংক্রমণ যে গতিতে বাড়ছে তাতে ওই হার দ্রুতই বাড়তে পারে। গত বছর জুনে বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তের হার ৬০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছিল। গত বছর জুন মাসে করোনায় সর্বোচ্চ ৫১জনের মৃত্যু হয়েছিল। 


জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুাযায়ী, মে মাসের ৩১ দিনের তুলনায় জুন মাসের ১৬ দিনেই করোনায় দ্বিগুণেরও বেশি আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে জেলায় করোনায় মোট ৪৩৮জন  আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ২১জনের। আর চলতি জুন মাসের ১৬ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০৫জন আর একই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২০জন। এর মধ্যে একই পরিবারের ১৭ সদস্যের মধ্যে ১২জনের আক্রান্ত হওয়া এবং দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা স্বাস্থ্য বিভাগকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। 


স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীর ৭০ ভাগই বাইরের বিশেষত নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা। ওই দুই জেলার রাগীদের চাপে এরই মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের  সাধারণ এবং আইসিইউ মিলে যে ১০০ টি শয্যা ছির তার ৯৪টিই পূর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষায়িত ওই হাসপাতালে শয্যা কমতে থাকায় করোনা আক্রান্তদেরকে নিয়ে স্বজনরা এখন সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল নয়তো বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে ছুটছেন। এ কারণে ওই দু’টি হাসপাতালের শয্যাও ক্রমশ কমে আসছে। 


মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. খায়রুল বাশার মোমিন জানিয়েছেন, সেখানে বুধবার দুপুর পর্যন্ত আইসিইউসহ করোনা ইউনিটের ১১৬টি শয্যার মধ্যে ৭০টিতেই রোগী ভর্তি আছেন। অন্যদিকে বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতলের সহকারি নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম রুবেল জানান, তাদের হাসপাতালের ১৭০ শয্যার মধ্যে ৬৬টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন। তিনি জানান, চিকিৎসাধীন রোগীদের ৮০ ভাগই অন্য জেলার বাসিন্দা।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতলের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের গড়ে ৫৫ শতাংশই ভারতীয় সীমান্তবর্তী নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা।


বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, নওগাঁ ও জয়পুরহাট থেকে চিকিৎসার জন্য আসা করোনা আক্রান্তদের স্বজনরা নানা প্রয়োজনে এখন বগুড়া শহরে যাতায়াত করছেন। এতে বগুড়া বিশেষত শহরের করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবণতির দিকে যাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা যদি পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় তাহলে গত বছরের জুনের মত এবারও সংক্রমণের হার ৬০ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে।


বগুড়ায় হঠাৎ করে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে ভারতীয় ধরণকে সন্দেহ করছন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, জুন মাসের শুরুতে বগুড়া শহরের সুত্রাপুর এলাকার একটি বাড়িতে এক সঙ্গে ১৫জনের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর তাদের নমুনা পরীক্ষায় ১২জনের কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ওই ১২জনের অবস্থা এত দ্রæত অবণতি হতে শুরু করে যে তাদের সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এর মধ্যে দু’জন মারা যান এবং আরেক জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। বাকিরা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে এক নারী চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা আক্রান্ত ওই ১২জনের জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করতে পারিনি, তবে সংক্রমণের তীব্রতা দেখে ধারণা করছি তারা করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টই আক্রান্ত হয়েছেন।’


বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করা হবে কি’না-এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা আমাদের জানিয়েছে যেহেতু ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে তাই এটার পেছনে সময় নষ্ট না করে বরং আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত।’