স্কুলের শিক্ষার্থীদের মদপান: বগুড়ার অভিভাবক ও সচেতন মহল চিন্তিত

অরূপ রতন শীলঃ
প্রকাশ: ০৭ অগাস্ট ২০১৮ ১০:২৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৪০ বার।

বগুড়ায় মদ পানের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুল ও কলেজের ৩ শিক্ষার্থী আটকের ঘটনাটি অভিভাবক এবং সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। খোদ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারাও বিস্মিত হয়েছেন। তাছাড়া ওই তিন শিক্ষার্থীর কারণে  বগুড়া জিলা স্কুল ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। বিশিষ্টজনরা মনে করেন ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনা এটাই বলে দিচ্ছে যে, মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিকতার ধারা আজ সবচেয়ে নিম্নস্তরে চলে গেছে।
তারা বলছেন, এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে প্রথমেই শিক্ষার্থীদের পরিচর্যার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষকদের যত্নশীল হতে হবে পাশাপাশি অভিভাবদেরও সময় দিতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী-এই ত্রিমুখী সম্পর্ক আরও জোরালো করতে হবে; তা না হলে অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না। আর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক মাদক বিরোধী কমিটিগুলোকে আরও সোচ্চার করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।


বগুড়া জিলা স্কুলের মাঠে বসে মদ পানের সময় সোমবার দুপুরে পুলিশ ৩ শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক তিনজনের মধ্যে দু’জন জিলা স্কুলের নবম এবং দশম শ্রেণির ছাত্র। অন্যজন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। খবরটি বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ওইদিন রাত ৮টার দিকে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন।


আটক তিনজনকে পরে থানায় নেওয়া হলেও সবার বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে অভিভাবকের ডেকে নিয়ে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানিয়েছেন, তাদের বয়স বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই কারণে ওই তিন ছাত্রের নাম ও ছবি পুণ্ড্রকথাও প্রকাশ করেনি।


তবে বয়স বিবেচনায় পুলিশ ওই তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আপাতত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও বগুড়া জিলা স্কুল এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আভ্যন্তরীণ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শহরের টিনপট্টি এলাকার বাসিন্দা আরিফুর হক বলেন, আমাদের কোমালমতি ছেলেদের এমন অবক্ষয়ের কথা শুনে আমরা খুবই চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘আমার ঘরেও কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে রয়েছে। সোমবার রাতে যখন জিলা স্কুলের ওই ঘটনাটি শুনলাম তখন ভেতরটা খান খান হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের সবাইকে এখন জাগতে হবে। ওদের ভুল করতে দেওয়া যাবে না।’

শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নানামুখি কর্মসূচী রয়েছে। ওই দপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া স্কুলগুলোতে তারা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাদক বিরোধী সভাও করে থাকেন। কিন্ত এত কিছুর পরেও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দিলারা জামান পু-্রকথাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জানতাম না। শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য আমরা নানামুখি কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিদ্যালয় কেন্দ্রিক মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটিগুলো আরও কার্যকর হতে বলবো পাশাপাশি অভিভাবকদেরও তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেব।’


বগুড়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট লেখক-প্রাবন্ধিক বজলুল করিম বাহারের মতে ‘এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আমাদের নৈতিকতার ধারা সবচেয়ে নিম্নস্তরে চলে গেছে। তবে এখন সময় এসেছে সবার মধ্যে ত্যাগ অর্থাৎ সেক্রিফাইসের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকরে মনে করিয়ে দিতে হবে ছাত্রদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শুধু ক্লাস রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যাগাযোগ বাড়াতে হবে, তাদের পরিচর্যা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এর পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখতে হবে।’


বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক হাবিব পুণ্ড্রকথাকে বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। প্রমাণ মিললে অবশ্যই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শিগগিরই অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ করবো। সেখানে তারা যেসব পরামর্শ দিবেন তার ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। যে মুহুর্তে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি তখন এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য খুব কষ্ট দায়ক। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আর যে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেটার প্রমাণ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’