‘ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড থেকে পিয়ন, সবাই ঘুষের ভাগ পায়’

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৯ বার।

রবিবার (১৩ জুন) রাজধানীর দনিয়া ভূমি অফিসে আমির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার সাথে খুব বাক-বিতান্ডা করছে। পরে জানা গেলে আমির সাহেব তার ক্রয়কৃত জমির নামজারি করানোর জন্য ঘুরছেন কিন্তু ভূমি অফিসের কর্মকর্তরা তাঁকে আজ বলে এই কাগজ নেই, কাল বলে ওই কাগজ নেই বলে গত তিন মাস যাবৎ ঘুরাচ্ছেন।। তিনি বলেন যদি ভূমি কর্মচারীদের তাদের দাবিকৃত টাকায় রাজি হয়ে যেতাম তাহলে নাকি তারা ১৫ দিনের মধ্যে নামজারি করে দিত। খবর ইত্তেফাক

এভাবেই চলছে রাজধানীর ভূমি অফিসগুলোর কার্যক্রম। ইত্তফাক অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেড়িয়ে এসেছে রাজধানীর ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতির নানা হালচিত্র।

নামজারিসহ বিভিন্ন কাজে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভূমি মালিকরা। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না সবুজবাগ ভূমি অফিসে। ঘুষের রেটও মোটামুটি বেঁধে দেওয়া। প্রতিটি নামজারির জন্য অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ভূমি অফিসের এক সহকারী কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘুষ শুধু আমার পকেটেই যায় না। এর ভাগ সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) থেকে শুরু করে কানুনগো, সার্ভেয়ার, নামজারি সহকারী এমনকি পিয়ন-দারোয়ানরা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।’

ভূমি অফিসগুলো হয়রানি নিয়ে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মানুষের যাতে ভূমি অফিসে এসে কোন কাজ করতে না হয়- আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাটাকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে চাই। আমি যদি মানুষকে কাজের জন্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করতে পারি, তবে দুর্নীতি জিরো হয়ে যাবে। রাতারাতি তো মানুষকে বদলে দেওয়া যাবে না। এজন্য আমরা সিস্টেমে হাত দিয়েছি।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ভূমি অফিসে গিয়েও দেখা গেল একই চিত্র। ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (সহকারী তহশিলদার) সঙ্গে সুনীল কর্মকার নামের এক ব্যক্তি তর্ক করছিলেন। সুনীলের অভিযোগ, তিনি হিন্দু বলে তার কাছ থেকে বেশি খরচ নেওয়া হচ্ছে। ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করে এক কর্মকর্তা বলেন, কোন কাজে কাকে কত ঘুষ দিতে হবে, সে বিষয়ে সহায়তার জন্য প্রতিটি ভূমি অফিসে ঝোলানো রয়েছে অঘোষিত ঘুষের তালিকা।’

গুলশান ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কিছুটা চালাকি অবলম্বন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেন চলে। অভিজাত এলাকা বলে এখানে কোন কাজ করাতে হলে ঘুষের টাকার পরিমান বেশী।

এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। আমরা নিজেরাও চাই জনগণ যাতে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার না হয়। হয়রানি ও দুর্নীতি এখানে থাকতে পারবে না। এজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গী ও কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ সংখ্যক ভূমিসেবা গ্রহীতাদেরকে স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে ও হয়রানি মুক্তভাবে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আবহমান কাল থেকে প্রচলিত বিধি-বিধানের আলোকে চালুকৃত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় পদ্ধতি ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে।’