গাইবান্ধার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্তদের বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১ ১৩:৩৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৩ বার।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে দুই  প্রতিষ্ঠানে মিষ্টির মূল্যকে কেন্দ্র করে মাদকাসক্ত এক যুবকের ছুরিকাঘাতে রোকনুজ্জামান সরদার (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। এই নির্মম হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। নিহত রোকনুজ্জামান সরদার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে। তিনি বালুয়া বাজারের সাইকেল পার্টসের ব্যবসা করতেন।

এই ঘটনায় আহত হয়েছেন একই গ্রামের মোজাম্মেল সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান ও ইউপি সদস্য সাথি সরদার। জিল্লুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি সোহেলের মা পদ্ম বেগমকে আটক করা হয়েছে।

রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও এলাকাবাসী জানান, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে ভাই ভাই হোটেল মালিক কনক মহন্ত ১৫০ টাকা এবং কাজী হোটেলের মালিক সোহেল মিয়া ১৮০ টাকা করে মিষ্টি বিক্রি করতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সোহেল মিয়া এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী ও বখাটে হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার রাতে কনক মহন্তকে বেদম মারপিট করেন সোহেল। বিষয়টি ইউপি সদস্য আশিকুজ্জামান সাথী ও রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে জানালে তারা রাত ১০টার দিকে কাজি শফিউর রহমানের ছেলে সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে যান। কথাবার্তার এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য সাথী ও তার সাথে থাকা লোকজনের ওপর মাদকাসক্ত সোহেল, তার ভাই সুমন ও অন্য ভাই ছুটিতে আসা পুলিশ সদস্য সোহান ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এ সময় সাথীকে বাঁচাতে গেলে সাথীর দুই চাচা ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান  সরদার ও জিল্লুরকে সোহেল ও তার ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। এতে গুরুতর আহত হয় রোকন সরদার, জিল্লুর রহমান ও ইউপি সদস্য আশিকুজ্জামান সাথি। বখাটে সোহেল রোকনের পেটে ও হাতে ফল কাটা ছুরি ঢুকিয়ে দেন।

স্থানীয়রা রাতেই তাদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোকন সরদারকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। জিল্লুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইউপি সদস্য সাথীকে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে রোকনুজ্জামান হত্যার ঘটনায় উত্তেজিত জনতা মিছিল বের করে। তারা সোহেল, তার ভাই সুমন এবং সোহানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাজী হোটেলে ও তাদের বসতবাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে আশপাশের দোকানের মালামাল গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে বের করে রাখা হয়। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, মিষ্টির দাম নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সদর থানার ওসি (অপারেশন) রজ্জব আলী জানান, এ ব্যাপারে সোহেল মিয়া ও তার ভাইসহ ১৬ জনের নাম দিয়ে ও অজ্ঞাত পরিচয় আরো ১২ জনকে আসামি করে শুক্রবার হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রোকনের ভাই খোকন।