শের-ই বাংলা হল পরিত্যক্ত
আ. হক কলেজের শহীদ মুন ও তিতুমীর হল দশ বছর পর খুলে দেওয়া হচ্ছে
পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রায় দশ বছর বন্ধ থাকার পর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের দুই ছাত্র হোস্টেল অবশেষে খুলে দেওয়া হচ্ছে। হোস্টেল দু’টির মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষের পথে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ‘শহীদ আখতার আলী মুন হল’ নামের হোস্টেলটি চলতি মার্চের শেষ দিকে খুলে দেওয়া হবে। আর পাশের ‘শহীদ তিতুমীর হল’ জুন মাস নাগাদ ব্যবহার উপযোগী হবে। তবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ‘শের-ই বাংলা হল’ নামে কলেজের প্রাচীণ হোস্টেলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, হোস্টেল দু’টি মেরামত ও সংস্কার কাজ করছে সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। তাদের কাজ শেষ হলেই আগ্রহী ছাত্রদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে হোস্টেলের সিট ভাড়া আগের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনে বিগত শতাব্দীর সত্তর দশকে ‘শের-ই বাংলা হল’ নামে ৪৬ সিট বিশিষ্ট একটি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। তার থেকে কিছুটা দুরে আশির দশকে ‘শহীদ তিতুমির হল’ নামে ৭৬ সিটের আরেকটি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ‘শহীদ আকতার আলী মুন’ নামে ১০০সিটের আরও একটি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়।
২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ হোস্টেলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। আবাসিক ছাত্রদের হলত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর সেগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তার ছয় মাস পর ২০১০ সালের মাঝামাঝি একবার হোস্টেলগুলো খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনও নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনটি হোস্টেলে ২২২টি সিটের বিপরীতে অন্তত ৪০০টি আবেদন জমাও পড়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কায় শেষ মুহুর্তে কর্তৃপক্ষ হোস্টেলগুলো আর খোলেন নি।
ওই হোস্টেলগুলোতে আবাসিক ছাত্রদের চাহিদার বিপরীতে স্বল্প সংখ্যক সিট থাকলেও ভাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন মেসের চেয়ে কম হওয়ায় বরাবরই দেড় থেকে দুই গুণ বেশী শিক্ষার্থী অবস্থান করতো। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ওই হোস্টেলগুলোতে প্রতিটি সিটের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে বছরে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হোস্টেল তিনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দরজা-জানালাসহ আসবাবপত্র ও বৈদ্যুদিক সরঞ্জামগুলো চুরি হয়ে যায়। ছাত্রদের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের মাঝামাঝি হোস্টেল তিনটি খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। মেরামত ও সংস্কারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে। তারা হোস্টেলটি তিনটি পরিদর্শন করে কলেজের পশ্চিম-উত্তর কোণে অবস্থিত প্রাচীন শের-ই বাংলা হলটি ব্যবহারের অনুপযোগী বলে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ফলে বাকি দু’টি হোস্টেল মেরামত ও সংস্কারের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টে-ার আহবান করা হয়।
দশ বছর পর হোস্টেল দু’টি আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে-এমন খবরে দূরের শিক্ষার্থীরা উচ্ছসিত। ওই কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর ইসলাম জানান, ভর্তির পর থেকে তারা হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ ব্যক্তি মালিকানাধীন মেসে একদিকে যেমন ভাড়া বেশি দিতে হয়, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব নাজুক। তিনি বলেন, ‘অনেক পরে হলেও আমাদের হলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে এটা অবশ্যই আনন্দের খবর। কলেজের নিজস্ব হলে থাকতে পারা সব দিক দিয়ে ভাল।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, দু’টি হোস্টেলের মধ্যে শীহদ আখতার আলী মুন হলের মেরামত ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু খাটসহ কিছু আসবাবপত্র সংযোজন বাকি রয়েছে। তবে পাশের শহীদ তিতুমীর হলের মেরামত কাজ এখনও কিছু বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি মার্চ মাসের মধ্যে শহীদ আখতার আলী মুন হল খুলে দিতে পারবো। আর শহীদ তিতুমীর হলটি হয়তো জুনের শেষ নাগাদ খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী জানান, মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই তারা হোস্টেলে থাকতে আগ্রহী ছাত্রদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করবেন। যাচাই-বাছাই শেষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে। সিটের ভাড়া কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা এখনও নির্ধারণ করিনি। এটা আমরা বসে ঠিক করবো। তবে আগের তুলনায় কিছুটা তো বাড়াতে হবেই।’