উপজেলা নির্বাচন

বগুড়ায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, প্রার্থীরাও প্রস্তুত: তবে আগ্রহ কম ভোটারদের

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৬:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৪ বার।

বগুড়ায় উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ভোট কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও ভোটারদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। বগুড়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে আর কোন বড় দল অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হচ্ছে না। আর সে কারণে ভোটারদের মধ্যেও তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
বগুড়ায় ১২টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে শেরপুর ও আদমদীঘি উপজেলায় এরই মাঝে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকী ১০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩৮জন প্রার্থী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরও ৪৩জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হয়। বাদবাকি ৫টিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটভুক্ত জামায়াত সমর্থিতরা জয় পায়। তবে এবারের নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানদের কেউই প্রার্থী হননি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৬জন ভোটারের জন্য ৯৫৪টি ভোট কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোট কেন্দ্রের প্রায় ৭০ শতাংশ বা ৬৬৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির অন্তত ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা রুখতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশের ১০৬টি ভ্রাম্যমাণ টিমের পাশাপাশি ২৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং আরও ১০০টি টিমকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এরই মধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচার শেষ করেছেন। এখন তারা ভোটের দিন ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আনা এবং নিজের পক্ষে সমর্থন নেওয়ার নানামুখি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষ তথা ভোটারদের তেমন আগ্রহ না থাকায় প্রার্থীরা রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পাওয়ার আশা করলেও বেকায়দায় পড়েছেন স্বতন্ত্র এবং বিএনপি থেকে বহিস্কৃত প্রার্থীরা। 
 অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোট নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ সবচেয়ে কম আদমদীঘি ও শেরপুর উপজেলায়। আদমদীঘিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আগামী ১৮ মার্চ সেখানে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। স্থানীয় এক প্রবীণ সাংবাদিক বলছেন, যেহেতু চেয়ামর‌্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না তাই দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।অন্যদিকে শেরপুরে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যানও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে এখন শুধু মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, মহিলা ভাইস চেয়ারমানের একটি পদে নির্বাচনের কারণে ভোটার দিন ভোটারদের বাড়ি থেকে কেন্দ্রে নিয়ে আসাই কঠিন হবে।
ধুনট উপজেলা পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক জিয়াউল আলম শাহীন জানান, ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের কোন আগ্রহ না থাকায় তিনি শেষ মুহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, উপজেলা ভোট নিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরই ব্যাপক উৎসাহী মনে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যেহেতু সাধারণ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না তাই নির্বাচনটাও একপেশে হবে। এ কারণে আমি সরে দাঁড়িয়েছি।’ দুপচাঁচিয়া উপজেলায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কল্যাণ প্রসাদ পোদ্দার বলেন, ‘ভোটারদের মনে এক ধরনের সংশয় রয়েছে। ভোট চাইতে গেলে তারা প্রথমেই যে প্রশ্নটি করে সেটি হলো ভোট সুষ্ঠু হবে কি’না? আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করছি, আপনারা ভোট দিতে আসবেন, ভোট সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে। কিন্তু তার পরেও অনেকেই বুঝতে চাইছেন না। দেখা যাক কি হয়!’
তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বলছেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাবে। বগুড়া সদর উপজেলা নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান সফিক বলেন, ‘আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লোকজন উন্নয়নের স্বার্থেই ভোটের দিন দলে দলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দিবেন।’ দুপচাঁচিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান খান সেলিম বলেন, ‘আমি ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি।’ 
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক জানান, এবার উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক কম। এর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হলো- বড় একটি রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনেকটা খেলার মত। সেখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে একটি না আসে তাহলে যেমন দর্শকের আগ্রহ থাকে না তেমনি ভোটের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।’
বগুড়া জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম শাহ্ জানান, ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের আমরা বলবো, আপনারা আসুন এবং নির্বিঘেœ আপনাদের ভোট প্রদান করুন।’