এপিবিএনের প্রাক্তন ছাত্র

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে গুলির মুখে পড়েও বগুড়ার জুবায়ের বেঁচে গেছেন

বিশেষ রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০১৯ ১৬:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৮২ বার।

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের মতই জুবায়ের রহমান নামে বগুড়ার আরও এক যুবক অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে যাবার সময় সশস্ত্র অস্ট্রেলিয় ব্রেনটন ট্যারেন্ট বগুড়ার ছেলে জুবায়েরের গাড়ি লক্ষ্য করে দু’বার গুলি ছুঁড়েছিল। এতে জুবায়েরের গাড়ির সামান্য ক্ষতি হলেও সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। ওই ঘটনার পর থেকে জুবায়ের রহমান ছুটি নিয়ে অকল্যান্ডে অবস্থান করছেন।


জুবায়ের রহমানের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগ করেছেন পুণ্ডকথার স্টাফ রিপোর্টার দোস্ত আউয়াল। এরপর পুণ্ডকথার চীফ রিপোর্টার অরূপ রতন শীল এবং সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আরেফিন শুভ কথা বলেন বগুড়ায় জুবায়েরের ভাই জিল্লুর রহমানের সঙ্গে।


গত ১৫ মার্চ শুক্রবার জুম’আর নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নূর ও লিনউড নামে পৃথক দু’টি মসজিদে ঢুকে গুলি চালায় মুসলিম বিরোধী হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ২৮ বছরের ব্রেনটন ট্যারেন্ট। এতে ৪ বাংলাদেশিসহ ৫০জন নিহত এবং আরও অর্ধশত মুসল্লী আহত হন। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয় ওই সন্ত্রাসীর গুলিতে আল নূর মসজিদে ৪৩ জন এবং তার কাছাকাছি লিনউড মসজিদে নিহত হয়েছেন আরও ৭জন।


নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্য জুম’আর নামাজ আদায়ের জন্য ওইদিন দুপুরে বাস নিয়ে আল নূর মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বহনকারী বাস মসজিদ থেকে যখন মাত্র ৫০ গজ দূরে তখনই এক নারী তাদের বাসের সামনে এসে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়া সশস্ত্র এক যুবকের গুলিতে বহু মানুষের প্রাণহানির কথা জানান। মহিলাটি মুশফিক-তামিমদের মসজিদে না যেতেও অনুরোধ করেন। তার কথা শুনে বেঁচে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ওই ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের অন্ধকারতম দিন হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন।


পুরান বগুড়ার বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী জুবায়ের রহমান ২০১৫ সালের শেষ দিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। ক্রাইস্টচার্চের ‘স্পার্ক নিউজিল্যান্ড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাস্টমার অ্যাডভাইজার হিসাবে তিনি কর্মরত। ব্যবসায়ী বাবা ও গৃহিনী মা’র চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট জুবায়ের বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) স্কুল ও কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। তিনি নিউজিল্যান্ডের অ্যাসপায়ার ইন্টারন্যাশনাল-২ থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে পড়াশোনা করেছেন।


বগুড়ার যুবক জুবায়েরের ভাষ্যমতে, লিনউড মসজিদগামী সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ওই সন্ত্রাসী প্রথম তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এরপর ওই সন্ত্রাসী লিনউড মসজিদে গুলি চালিয়ে মুসল্লিদের হত্যা করে বের হওয়ার সময় জুবায়েরের গাড়ি লক্ষ্য করে দ্বিতীয়বার গুলি করে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টার দিকে (নিউজিল্যান্ড সময় দুপুর ১টা) ওই ঘটনার পর পরই জুবায়ের ফোনে পুরো ঘটনা বগুড়ায় অবস্থানরত তার ভাই জিল্লুর রহমানকে জানান। জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমার ভাই জুবায়ের বেঁচে গেছে।’


জুবায়ের রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে জুম’আর নামাজ আদায়ের জন্য তিনি অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে লিনউড ইসলামিক সেন্টার মসজিদের দিকে রওনা হন। কিছুদূর যাওয়ার পর ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে তার গাড়ি থেমে যায়। কিছু সময় পর চলার সংকেত পেয়ে জুবায়ের যখন তার গাড়ির এক্সিলেটারে চাপ দিতে যাবেন তখনই পেছন থাকা একটি গাড়ি তাকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। পাশ দিয়ে যাবার সময় ওই গাড়ির ভেতর থেকে জুবায়ের রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। হতভম্ব জুবায়ের তখন থেমে যান। 


জিল্লুর রহমান জানান, প্রথমবার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার পরও প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় জুবায়ের তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। তার মনে হয় তিনি জুম’আর নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন বলেই আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন। এরপর জুবায়ের গাড়ি নিয়ে লিনউড মসজিদের দিকে রওনা হন। গেট দিয়ে গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় দেখতে পান সন্ত্রাসী সেই যুবক অস্ত্র নিয়ে ওই মসজিদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসছে। সামনে দেখতে পেয়ে ওই যুবক জুবায়েরের গাড়ি লক্ষ্য করে আবারও গুলি করে। এরপর জুবায়ের ইউটার্ন নিয়ে দ্রুত ফিরে যান।


ওই দিনের পরিরস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে জুবায়ের রহমান বলেন, ‘সেদিনের অভিজ্ঞতাটা ছিল ভয়াবহ।’


জিল্লুর রহমান তার ভাই জুবায়েরসহ নিউজিল্যান্ড বসবাসকারী বাংলাদেশীদের জন্য পুণ্ডকথা র মাধ্যমে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর থেকে আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে আমাদের পরিবারের দিন কাটছে। মাত্র ৬ মাস আগেই জুবায়ের দেশ থেকে ঘুরে গেছে। আপনাদের মাধ্যমে আমি জুবায়েরসহ নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত সব বাংলাদেশীর জন্য দোয়া চাইছি।’