বগুড়ায় অধিকাংশ চালক জানেন না জেব্রা ক্রসিং কি?

অরূপ রতন শীল
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৯ ১৩:৩৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩০৫ বার।

বগুড়ার বেশীরভাগ চালকই রাস্তায় কখনো ‘জেব্রা ক্রসিং’ দেখেনি। হয়তো অনেকের কাছে এর সংজ্ঞাটাও অজানা।  লাইসেন্সধারী চালকেরাও এর ব্যতিক্রম নয়। এই না জানাটা যেমন আশ্চর্যের, তেমনি শঙ্কার।


সড়ক দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি আহত বা নিহত হলেই প্রতিবাদে সারা দেশেই মানববন্ধন গাড়ি ভাংচুর রাস্তা অবরোধ অহরহ হচ্ছে। তাই সারাদেশের ন্যায়  সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে বগুড়াতেও হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সেই আন্দোলন থেকেই বগুড়ায় ট্রাফিক সপ্তাহ, ট্রাফিক ক্যাম্পেইন এবং শহরের বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে,  স্কুল ও কলেজের সামনে ‘জেব্রা ক্রসিং’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শহরের রাস্তায় ইতিবাচক কোন পরিবর্তন আসে নি। 


ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের আগে সকল যানবাহন চালকদেরকে জেব্রা ক্রসিংসহ সড়কের অন্তত ১৫ টি নির্দেশনা সম্বন্ধে ধারণা দেয়া হয়। কিন্তু বগুড়া শহরে চলাচলরত ৮৫ ভাগ চালকই জানে না ‘জেব্রা ক্রসিং’ এর মানে কি। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সেই সাধারণ মানুষের মতো ‘জেব্রা ক্রসিং’ সম্বন্ধে জানেন না যানবাহন চালকেরাও। তার মানে এই নয় যে লাইসেন্সধারী চালকেরাও জানবে না। দু-একজন চালক ছাড়া সবার কাছে ‘জেব্রা ক্রসিং’ হচ্ছে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ একটি মোটা সাদা দাগ।


এবার জেনে নেই জেব্রা ক্রসিং কি?

সহজ কথায় পথচারী রাস্তা পার হবার জন্য রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি বা সোজাসুজি যে দাগ দেয়া হয় তাকেই জেব্রা ক্রসিং বলে l 
সাধারনত স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল মানে যেখানে পাবলিক সমাগম বেশি থাকে, সেখানে মানুষ যাতে সহজে রাস্তা পারা পার হতে পারে সেজন্যই জেব্রা ক্রসিং দেয়া হয় l যদিও কোথাও কোথাও ফুটওভার ব্রিজ থাকে l 


নিয়ম হলো জেব্রা ক্রসিং এর সামনে গাড়িগুলা একটা নির্দিষ্ট গতি সীমার নিচে নিয়ে আসবে যাতে পথচারী সহজেই রাস্তা পার হতে পারে l কিন্তু আমাদের দেশে আমরা কি দেখছি? ঠিক যেন তার উল্টো টা! আর হবেই না কেন ? বগুড়া শহরের বেশির ভাগ জেব্রা ক্রসিং গুলি তিন রাস্তা, চৌ রাস্তা অথবা রাস্তার মোড়ে রয়েছে। কিন্তু বেশীর ভাগ চালক মানছে না জেব্রা ক্রসিং এর  নিয়ম নীতি।


তাই দেখা যায় সাধারণ ভাবে যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে জেব্রা ক্রসিং এর সামনেও একই গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে l শুধু সাধারণ রিকশা চালকই এই কাজ করছে না এলিট শ্রেণী নামের মুখোশ পরা অতি ভদ্র লোকেরাও একই কাজ করছে l এছাড়া যে কজন চালক ‘জেব্রা ক্রসিং’ জানে তারা কেউই মানছে না এ নির্দেশনা। ফলে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো যেমন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি দুর্ঘটনাও এড়ানো যাচ্ছে না।


নারুলীর চালক দেলোয়ার আহমদের কাছে জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি পুণ্ড্রকথাকে  বলেন, ‘জেব্রা ক্রসিংকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে হয় না। আমি আমার মত করে গাড়ি চালাই। এ ব্যাপারে জনগণও আমাদের কিছু বলে না। পুলিশও কোনো কিছু বলে না।’


জেব্রা ক্রসিংয়ের নির্দেশনা সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন- ‘আমাদেরকে কেউ জেব্রা ক্রসিং সমন্ধে কোনো কিছু বুঝায় নি। তাছাড়া আমরাও জেব্রা ক্রসিং সমন্ধে জানতে আগ্রহী হই নাই।’


গাবতলী থেকে শহরে  আসা অটোরিকশা চালক রহমান আলী জানান, ‘শহরে রিকশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাছাড়া মোটরযানও অনেক বেশি। তারা কোনও সিগন্যাল মানতে চায় না।


শহরের নিজাম শেখ নামের সিএনজি চালক  বলেন- ‘জেব্রা ক্রসিং নিয়ে শিখার কিছু নেই, সবই বুজি কিন্তু পালন করি না। আমরা আমাদের সুবিধামত মত গাড়ি নিয়ে চলাচল করছি।’

সাতমাথার ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে পথচারী লায়লা খাতুন জানান, জেব্রা ক্রসিং কিভাবে ব্যবহার করবো। এমন জায়গায় দেয়া হয়েছে যেখানে অন্য রাস্তায় পার হতে লাফ দিতে হয়। যা আমাদের জন্য কষ্টকর।

এ সময় আরো বেশ কয়েকজন চালক ও পথচারীদের  সাথে কথা বলে একই ধরণের হেয়ালি বক্তব্য পাওয়া যায়।


এ ব্যাপারে সদর থানা ট্রাফিকের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর খলিলুর রহমান বলেন, বগুড়া শহরের মধ্যে মাত্র ৭ টি জেব্রা ক্রসিং রয়েছে ।  যা সংখ্যায়  খুবই  ছোট। তবে আমরা এটা দ্রুত বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

শহরে কেও জেব্রা ক্রসিং মানছে না এই প্রসঙ্গে তিনি পুণ্ড্রকথাকে বলেন, এই নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজনের চেষ্টা করছি। তবে ব্যাপক প্রচারণই পারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার নিশ্চত করতে । সবশেষে তিনি বগুড়া শহরের মধ্যে যানযট ও দূর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির সুপারিশ করেন।