সুবর্ণচরে ধর্ষণের আসামি রুহুলের জামিন নজিরবিহীন ঘটনা: অ্যাটর্নি জেনারেল

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৯ ১৪:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৮ বার।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নারীকে মারধর ও ধর্ষণ মামলার আসামি রুহুল আমিনের জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার আইনজীবী। রুহুল আমিনের জামিন নজিরবিহীন ঘটনা। যেখানে পুরো জাতি ধর্ষণ মামলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ, সেখানে জামিন হওয়ায় সবাই হতবাক।

রুহুল আমিনের জামিন বাতিলের আদেশের পর শনিবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।

বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হবে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। একই সঙ্গে কোনো মামলায় জামিন নেয়ার জন্য এক কোর্টের কথা বলে অন্য কোর্টে শুনানি করা ঠিক নয়। এ ঘটনা আদালত অবমাননার শামিল বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা।

কীভাবে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে জানাতে গিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সুবর্ণচরের আলোচিত গণধর্ষণ মামলার আসামি মো. রুহুল আমিনের জামিনের জন্য তার একজন আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। তার নাম আশেক-ই রসুল। তিনি আমাদের অফিসকে (অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়) জানিয়েছিলেন, তার আবেদনটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে শুনানি হবে। কিন্তু তিনি আবেদনটি বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চে শুনানি করেন এবং এই মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানববন্দি ও ভিকটিমের জবানবন্দি সন্নিবেশিত না করে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জামিন নেন। পরে আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারপতিদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে তারা চেম্বারে বসে এই জামিন আদেশটি রিকল করে বাতিল করেন। এর ফলে ওই আসামিকে দেওয়া পূর্বের জামিন আদেশটি বাতিল হয়ে গেল। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আর কার্যকর থাকল না। এখন আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেব, আসামি যাতে জেল থেকে বের হতে না পারে’।

তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই ঘৃণ্য তৎপরতা। আমরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনব যে, কিছু কিছু আইনজীবী এক আদালতের কথা উল্লেখ করে অন্য আদালত থেকে শুনানি করেন। বিচারপতিদের কাছেও আমাদের আবেদন তারা যখন মামলার পিটিশন দেখেন তখন তারা যেন লক্ষ্য রাখেন কোন আদালতে কয় নম্বর কোর্টের আবেদন করে পরে আরেক কোর্টে শুনানি করতে এসেছেন। এটা এক ধরনের আদালতের সঙ্গে প্রতারণা ও আদালত অবমাননার শামিল। ওই আইনজীবীর বিষয়টি প্রথমে প্রধান বিচারপতির নজরে আনব এরপর প্রয়োজনে বার কাউন্সিলের নজরে আনা হবে।’

মাহবুবে আলম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘যদি আদালতের সামনে সব তথ্য-প্রমাণ সন্নিবেশিত হতো তবে অবশ্যই আদালত জামিন দিতেন না। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জামিন নেয়া হয়েছিল, যা আদালত বুঝতে পেরে আদেশটি রিকল করে জামিন বাতিল করেছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আমি আদালতের কাছে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির আরজি জানাব। ২৫ মার্চ এ আবেদন করব। আদালতের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কারণে তারা বিষয়টি অনুধাবন করে বন্ধের দিনেও আদেশটি বাতিল করেছেন। তবে এ মূহূর্তে জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে সে যাতে জেল থেকে বের হতে না পারে।’

গত ১৮ মার্চ ওই হাইকোর্ট বেঞ্চ রুহুল আমিনকে এক বছরের জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার ওই আদেশের বিষয়টি জানাজানি হয় ২১ মার্চ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল দায়েরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শনিবার ছুটির দিনে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুহুল আমিনের জামিন বাতিলের আদেশ দেন। জামিন বাতিলের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুনঃআদেশের (রি কল) জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আশিক-ই রাসুল অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে মামলার যে কপি সরবরাহ করেন, তাতে হাইকোর্টের ১৪ নম্বর বেঞ্চ উল্লেখ না করে ১৭ নম্বর করেছিলেন। অথচ মামলা শুনানি হয়েছে ১৪ নম্বর বেঞ্চে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের সময় বিরোধীতা করা যায়নি।

তিনি বলেন, এ ছাড়া মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) রুহুল আমিনের নাম ছিল না। এখানে তাকে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে চার সন্তানের জননীর সঙ্গে কয়েক জনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে রুহুল আমিনের নির্দেশে ১০/১২ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই নারীকে গণর্ধষণ ও মারধর করে বলে অভিযোগ।

এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৯ জনের নামে মামলা করেন। মামলার পর গত ২ জানুয়ারি গভীর রাতে রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তারা এখন নোয়াখালী কারাগারে। রুহুল আমিন ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন সোহেল, বাদশা আলম, জসিম, বেচু, স্বপন, হাসান আলী বুলু ও ছালাউদ্দিন।

ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে ওই নারীকে হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাত ১২টায় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। পরে ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ওই নারী ও তার স্বামীকে গালাগালি করে। এরপর অস্ত্র দেখিয়ে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। ওই নারীকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করা হয়। পরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে।

ওই গৃহবধূর স্বামীর করা মামলার এজাহারে মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছিল। রুহুল আমিনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন ওই নারী। পরে রুহুল আমিনকেও আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয় এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়।