নন্দিত শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০২:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭১ বার।

'যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়/ সে হারালো কোথায় আজ দূর অজানায়/ সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি/ তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি/ ...'। বাংলা গানে কিংবদন্তিতুল্য খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকা শাহনাজ রহমতুল্লাহ নিজের গাওয়া গানের কথার মতোই মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে চিরদিনের মতো চলে গেলেন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খবর সমকাল অনলাইন।

দেশাত্মবোধক গানে এদেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক কণ্ঠস্বর শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তার গাওয়া কালজয়ী দেশাত্মবোধক অজস্র গানের মধ্যে তিনটি- 'এক নদী রক্ত পেরিয়ে', 'একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়', 'একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল' বিবিসি জরিপে সর্বকালের সেরা কুড়িটি বাংলা গানের তালিকায় স্থান অর্জন করে নেয়।

এ ছাড়া শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া দেশাত্মবোধক 'প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ', 'আমায় যদি প্রশ্ন করে' বাংলা গানের ভুবনে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছে। শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া অসংখ্য রোমান্টিক গানের মধ্যে 'যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়', 'হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছো তুমি' ইত্যাদি মানুষের মুখে মুখে আজও ফেরে।

শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায় এক সল্ফ্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বাবা এম ফজলুল হক, মা আসিয়া হক। বাবার অনুপ্রেরণা আর মায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একেবারে ছোটবেলায় শাহনাজের গানে হাতেখড়ি। তার দুই বড় ভাই- সুরকার আনোয়ার পারভেজ ও নায়ক-কণ্ঠশিল্পী জাফর ইকবাল নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তারা দু'জনও এখন প্রয়াত। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। সে সময় তার নাম ছিল শাহনাজ বেগম। একই বছর চলচ্চিত্রের গানে তার আত্মপ্রকাশ। ১৯৬৪ সালে শুরু করেন টেলিভিশনে গান গাওয়া। অল্পকালের মধ্যে সারাদেশে গায়িকা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন কিন্নরকণ্ঠের এই গায়িকা। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজের সুর ও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় অজস্র গানে কণ্ঠ দেন শাহনাজ। আনোয়ার পারভেজ ছাড়াও আলাউদ্দীন আলী, খান আতাসহ দেশের প্রথিতযশা সুরকার-গীতিকারদের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ষাট দশকে পশ্চিম পাকিস্তানে গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে সরাসরি গান শেখেন তিনি। ১৯৭৩ সালে আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

পরিশীলিত ও উদাত্ত কণ্ঠস্বর বাংলা ভাষার শিল্পীদের মধ্যে শাহনাজ রহমতুল্লাহকে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তোলে। তিনি স্বামী ও এক কন্যা, এক পুত্র রেখে গেছেন। তার দুই সন্তানই প্রবাসী।

রাতেই ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক গুণীজন শাহনাজ রহমতুল্লাহর বারিধারার বাসায় ছুটে যান। তাদের সকলেই আকস্মিক এই মর্মান্তিক সংবাদে ছিলেন শোকে স্তব্ধ।  শাহনাজ রহমতুল্লাহ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।