নওগাঁর ধামইরহাটে ভূমিহীনদের বসত বাড়িতে সন্ত্রাসীদের তান্ডব;পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিল ২০ ঘর

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯ ১৩:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৪৪ বার।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বস্তাবর-কাগজকুটা গ্রামের রোববার গভীর রাতে এক ভূমিহীন পল্লীতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা পেট্রল ঢেলে কমপক্ষে ২০টি বসত বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এসময় বাধা দিতে গেলে সন্তাসীদের হামলায় ওই পল্লীর অন্তত ৭/৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনের লেলীহান শিখা দেখে পাশের সীমান্তের বিজিবি সদস্যরা এগিয়ে আসলে সন্তাসীরা পালিযে যায়। এই ঘটনা জানার পর সোমবার দুপুরে ধামইরহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে ওই পল্লীর বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।


জানা গেছে,ওই গ্রামের পুকুর পাড়সহ প্রায় এক একর জমি খাস খতিয়ান দাবি করে সম্প্রতি টিনের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে অস্থায়ীভাবে ৩০ থেকে ৩৫টি ঘর নির্মাণ করে ওই এলাকার কতিপয় ভুমিহীন পরিবার বসবাস করে । এরমধ্যে ২০ টি আদিবাসী পরিবার ও বাকী ঘরগুলো নির্মাণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা (মুসলিম)। 


এ নিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন ওই জমি ক্রযসূত্রে দাবি করে গত ১০ মার্চ পল্লীর বাসিন্দাদের আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে করে। ওই মামলায় ভূমিহীন পল্লীর জাহাঙ্গীর আলম (২৫) ও জগন্নাথ পাহান (৪৫) নামে দুইজনকে আটক করে পুলিশ বুধবার জেল হাজতে পাঠায়।


এর দিনদিন পর রোববার রাত ১টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি মুখোশধারী ধারালো বড় বড় হাসুয়া,কুড়াল,তীর ধনুক,লাঠি ও হাতে পেট্রোলের বোতল নিয়ে অর্তকিত ওই পল্লীতে হামলা চালায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই সন্তাসীরা পেট্রল ফেলে ওই পল্লীর অন্তত ২০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এসময় বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা এ্যালোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। এতে শান্তি পাহান, তার ছেলে আকাশ পাহানলগেন পাহান,জাহাঙ্গীর আলমসহ ৭/৮ জন আহত হয়। ওই পল্লীর লগেন পাহান,আফিজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন এই জমির কথিত দাবিদার মোশারফর হোসেনের লোকজন মুখোশ পরে হাতে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের বসত বাতিে হামলা চালায়। তারা পেট্রল ঢেলে একটি একটি করে বাড়িতে আগন লাগিযে দেয়। আমাদের কোন জিনিস পত্র নিযে দেয় নাই। এতে আমাদের ধান,চাউল,কাপড় চোপড়,হাঁস-মুরগী,ছাগল,নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মৃত মোজাফ্ফর রহমানের বিধবা স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং মৃত ঘুটু পাহানের স্ত্রী শান্তি পাহান বলেন,সন্ত্রাসীদের হাতে ধারালো বড় হাসুয়া,কুড়াল,তীর ধনুক,লাঠি ও হাতে পেট্রোলের বোতল ছিল। দুর্বৃত্তরা এলোপাথাড়িভাবে তাদেরকে কোপাতে থাকে। এসময় আগনের শিখা দেখতে পেয়ে পাশের বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের টহলদল ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। 


এব্যাপারে মোশারফ হোসেন বলেন পাশের বীরগ্রামের সিরাজুল হক সিদ্দিকীর নিকট থেকে ১৯৭৭ সালের তারা ওই জমি ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছিলাম। দির্ঘদিন তাদের দখলে থাকা জমিতে হটাৎ করে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে দখলের জন্য ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে ধামইরহাট থানায় একটি নিজ দখলীয় জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গত বুধবার রাতে কাগজকুটা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৫) এবং একই গ্রামের মৃত গোবিন্দ পাহানের ছেলে জগন্নাথ পাহান (৪৫) কে আটক করে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। তবে ওইসব বাড়ীঘরে তিনি বা তার কোন লোকজন আগুন দেয়নি এবং এর সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।


ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো.জাকিরুল ইসলাম বলেন,ঘটনা জানার পরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেনি। মামলা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।