করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত: বাকি ৩৭ দখলদারের উচ্ছেদ কবে

বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালের অংশ বিশেষ স্ব উদ্যোগে ভাঙা শুরু

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০১৯ ১৭:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৬৩ বার।

বগুড়ায় করতোয়া নদীর জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা নিজেরাই ভাঙতে শুরু করেছেন ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রায় এক সপ্তাহ আগে একদল শ্রমিক তিন তলা ওই হাসপাতালের পূর্ব দিকের উপরের অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, নদ-নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে দিতে সরকার দেশব্যাপী নদী দখল মুক্তকরণের যে অভিযান শুরু করেছে তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই তারা নিজেরা অবৈধ স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। 
ডায়াবেটিক হাসপাতালের এই উদ্যোগকে জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নদীর জায়গা দখল করা উচিত নয় - এমন উপলব্ধি অনেক দেরিতে হলেও বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাল একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে।করতোয়া নদীর জায়গা আরও যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন আমরা আশা করবো তারাও ডায়াবেটিক হাসপাতালের মত নিজেরাই তাদের স্থাপনা অপসারণ করে মৃতপ্রায় নদীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন।’
বগুড়া জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, শহর এবং আশ-পাশের এলাকায় কয়েকটি মৌজায় করতোয়া নদীর জায়গা ৩৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখল করে নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক স্থানে নদীর জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে। ফলে দখলদার হিসেবে তাদের নামও একাধিকাবার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। 
বগুড়া সদরে করতোয়া নদীর দখলদার হিসেবে যাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তারা হলো- বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস, বগুড়া পৌরসভা, বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শহরের মালতিনগর এলাকার মোহাম্মদ বাদশা, হাজেরা বেগম, বাহালুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, লাল মিয়া, জাকির হোসেন, খলিলুর রহমান, মাটিডালি এলাকার আরিফ হোসেন, নাটাইপাড়ার সাইদুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, মশিউর রহমান, লুৎফর রহমান, আরিফা বেগম, আবুল কাশেম, বজলুর রশিদ, বজলার রহমান, মোহাম্মদ মিল্টন, গৌরদাস, অনিল কর্মকার, গোপাল চন্দ্র দাস, রাধা চন্দ্র দাস, প্রহ্লাদ, গোপিনাথ মন্দির ও সাহেব বাজার বায়তুল হামদ জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
এসব দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয় এমনকি মামলাও করা হয়। কিন্তু তার পরেও তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তবে ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট বা প্রায় ৮ শতক জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে।
বগুড়ায় ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এ অঞ্চলের ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে ২০০১ সালে শহরে নবাববাড়ি সড়কে তিনতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। যার পেছনের অংশ করতোয়া নদীর মধ্যে ঢুকে গেছে।
ওই সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ একটি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ করা ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সময়ে হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতেই নদীর ভেতরের কিছু জায়গা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নদীর ¯্রােতধারা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ওই অংশ ভরাট না করে বরং পিলার তুলে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নদীর ৮ শতক জায়গা দখলের অভিযোগ করা হচ্ছে। আসলে তা হবে সাড়ে ৬ শতক। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে এবং তারা বিষয়টি মেনেও নিয়েছেন।’
অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাটি উচ্ছেদের জন্য ইতিপূর্বে ৯ বার নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, ‘তৎকালীন কর্র্তৃপক্ষ যে ভুল করেছে তার দায় আমরা আর বহন করতে চাই না। তাছাড়া নদীগুলোকেও বাঁচানো দরকার। তাই আমরা নিজেরাই আমাদের স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছি। তৃতীয় তলা থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। শেষ করতে দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। আশাকরি আমাদের দেখাদেখি অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’
বগুড়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মাছুদার রহমান হেলাল বলেন, অন্য ৩৭ দখলদার যদি ডায়াবেটিক হাসপাতালকে অনুসরণ না করে তাহলে তাদের উচ্ছেদে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্য দখলদারর কবে নাগাদ উচ্ছেদ করা হবে তা জানতে চাইলে বগুড়া সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেন জানান, সবাইকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিক হাসপাতালের মত আরও দু’একটি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে চাচ্ছেন বলে শুনেছি। এটি ভাল উদ্যোগ। যারা সরাবে না আমাদের টিম তাদের খুব শিগগিরই উচ্ছেদ করবে।’