বগুড়ায় করতোয়া নদী দখল মুক্ত করতে অভিযান শুরু: মসজিদ উচ্ছেদে স্থানীয়দের বাধা

অসীম কুমার কৌশিক ও দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪০৭ বার।

বগুড়ায় করতোয়া নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের ভাটকান্দি এলাকায় পৌরসভার একটি পানির পাম্প ঘর উচ্ছেদের মাধ্যমে অভিযান শুরু করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজ উদ্দিন। তবে এর আগে ভাটকান্দি ব্রীজ সংলগ্ন একটি মসজিদ উচ্ছেদ করতে গিয়ে আভিযানিক দলটি এলাকাবাসীর তীব্র বাধার মুখে পড়ে। শত শত নারী মসজিদটিকে ঘিরে রেখে তা উচ্ছেদে বাধা দেন। 
এলাকাবাসীর বাধার মুখে ওই মসজিদ বাদ রেখে  পাশে অবস্থিত পৌরসভার পানির পাম্প ঘর এক্সেভেটর দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী  হাসান মাহমুদ, বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীসহ পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজ উদ্দিন জানান, তাদের অভিযান একদিনে শেষ হবে না। তিনি বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’


বগুড়া জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া সদর উপজেলার দক্ষিণে ভাটকান্দি থেকে উত্তরে মহিষবাথান এলাকায় পাঁচটি মৌজায় করতোয়া নদীর দুই তীরে ৩৮টি স্থানে নদীর জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩১। বাদবাকী ৭টি স্থানে আবর্জনা এবং বালু উত্তোলন করা হয়। দখলদারদের তালিকায় বগুড়া পৌরসভা, ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতাল ও বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসের নামও রয়েছে। 
 জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ওইসব দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয় এমনকি মামলাও করা হয়। কিন্তু তার পরেও তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর এখন পর্যন্ত শুধু ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো তা না করায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে উচ্ছেদ অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজ উদ্দিন পুলিশ, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের বিপুল সংখ্যক সদস্যসহ এক্সেভেটর ও একদল শ্রমিক নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভাটকান্দি এলাকায় যান। এরপর তার নির্দেশে শ্রমিকরা উচ্ছেদের জন্য তৈরি করা তালিকার শীর্ষে থাকা ভাটকান্দি ব্রীজ সংলগ্ন বায়তুল হামদ জামে মসজিদ ভাঙার প্রস্তুতি নেন। তবে আগে থেকেই ওই মসজিদের চারদিক ঘিরে থাকা শত শত নারী তাতে বাধা দেন। ওই নারীদের সঙ্গে এলাকার কয়েক শ’ মুসল্লীও যোগ দেন। এ সময় ওই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বগুড়া জেলা প্রশাসনের সাবেক কর্মচারী জিল্লুর রহমান দাবি করেন তারা যে স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন সেটি নদীর জায়গা নয় বরং তা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। তাই সেটি ভাঙা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গতকাল (বুধবার) জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাকে জানিয়েও এসেছি।’ 
স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে উচ্ছেদ অভিযানের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বগুড়া সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ স্থানীয় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘করতোয়া নদী রক্ষার দাবি বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি। কারণ নদী না বাঁচলে জীবন-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের কাছে থাকা রেকর্ডপত্র অনুযায়ী মসজিদটি নদীর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও যেহেতু আপনারা দাবি করছেন যে এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, তাই আবারও পরীক্ষা করে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তার এই বক্তব্যের পর পরই মসজিদের মাইক থেকে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তা জানিয়েছেন মসজিদ ভাঙা হবে না। আপনারা সবাই শান্ত থাকুন। তারা অন্যান্য স্থাপনা ভাঙবে আপনারা তাদের সহযোগিতা করুন।’
মসজিদটির অবস্থান নদী নাকি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মধ্যে এমন প্রশ্নের জবাবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘নদীর মালিকানা সর্ম্পূণ জেলা প্রশাসনের। তাই বিষয়টি তারাই ভাল বলতে পারবে। তবে আমরা যেটা জেনেছি মসজিদটি নদীর জায়গাতেই নির্মাণ করা হয়েছে। যেহেতু স্থানীয় জনগণ জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবি করেছে তাই সেটি পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেন বলেন, ‘রেকর্ড অনুযায়ী মসজিদটি নদীর জায়গাতেই নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু স্থানীয় জনগণ দাবি করেছে যে সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি তাই আবারও তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি মসজিদটি নদীর জায়গার মধ্যে পড়ে তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলা হবে।’