বনানী ট্রাজেডি: মৃত্যুর আগে ‘ক্ষমা চেয়েছিলেন’ টাঙ্গাইলের ক্রিকেটার তুষার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯ ১৩:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৬ বার।

রাজধানীর বনানীতে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারের আগুনে টাঙ্গাইলের নাহিদুল ইসলাম তুষার মৃত্যুর আগে স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সেই ক্ষমা চাওয়ার কথা উল্লেখ করে মাতম করছেন তার স্বজনরা।

তুষারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদী বিলাপ করতে করতে জানান, তুষার বলেছিলেন, আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরোতে পারব কিনা জানি না। আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে এবং মাফ করে দিতে বলো।

তুষারের ছোট ভাই শিশির জানান, আটকা পড়ার পর তুষার মোবাইল ফোনে তার বাবা ইসাহাক আলী, মা নূরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও শিশিরের সঙ্গেও কথা বলেন।

শিশির আরও জানান, ক্ষমা চাওয়া ছাড়াও ভাইয়া তাকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। তারপর বেলা ২টার দিকে ভাইয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।

শুক্রবার ভোরে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদায়ক অবস্থা তৈরি হয়। লাশ সামনে রেখে নিশ্চিত মৃত্যুপথযাত্রী স্বজনকে বাঁচাতে না পারায় সবার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীও অশ্রুসজল হয়ে যায়।

সকাল ১০টায় বাড়িতে জানাজা শেষে এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মাগুরা জেলা ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষক সৈয়দ সাদ্দাম হোসেন গোর্কি বলেন, তুষার একজন মেধাবী ক্রিকেটার। বলতে গেলে তিনি জেলার সেরা বা হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিনি জেলা ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। এছাড়া এইজ লেবেল-এ ১৪, ১৬ ও ১৮ জেলা ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সুত্রে তার বাবা বছর ১৫ আগে মাগুরা অসেন। তারা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বছর দুই আগে তারা মাগুরা থেকে চলে যান। তবে মাঝেমধ্যে তুষার মাগুরায় বেড়াতে আসতেন এবং ভবিষতে তার মাগুরায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

নিহত তুষার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভানুয়াবহ গ্রামের এছাক আলীর ছেলে। এফআর টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন তিনি।

মাস্টার্স পাস করার পর ওই ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি জীবন শুরু করেন তুষার। গেল চার বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছিলেন তিনি। এছাড়া তুষার মাগুরা জেলা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

তুষার মাগুরা সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকার বাংলা কলেজে লেখাপড়া করেন বলে গোর্কি জানান।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগে এফ আর টাওয়ারে। ভবনের নবম তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে ছড়িয়ে পড়ে ২৩তলা ভবনের বেশ কয়েকটি তলায়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বিমানবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। ভবনটির ছাদে আটকেপড়া অনেককে উদ্ধার করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণে হেলিকপ্টার থেকে ভবনটিতে পানিও ফেলা হয়।

ভয়াবহ এই আগুনে ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের লাশও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত অন্তত ৭৩ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।