বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন

সংসার করা হলোনা বগুড়ার মিথির, গ্রামের বাড়িতেই দাফন

এম আর ইসলাম রতন,নওগাঁ
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯ ১৪:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৮২ বার।

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন কেড়ে নিল তানজিলা মৌলি মিথির প্রাণ। বিয়ের মাত্র ৮ মাস পেরিয়ে যেতে না যেতেই সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে মিথি। বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার বশিপুর সরদারপাড়া গ্রামের অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদের একমাত্র সন্তান। মিথি বনানীর এফআর টাওয়ারে হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি কোম্পানিতে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা থাকাকালীন রায়হানুল ইসলাম রায়হান এর সাথে তার বিয়ে হয়। তিনিও কাজ করেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে।

 
মিথির বড় চাচা সালাউদ্দিন সরদার বলেন, মিথির অফিস ছিলো এফআর টাওয়ারের ১০ম তলায়। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবারেও অফিসে উপস্থিত হয় সে। ওই টাওয়ারে আগুন লাগার পর আটকা পড়লে ফুপাতো ভাই মৌসুমকে ফোন করে জানায় ‘আমি আটকা পড়ে আছি তোমরা আমাকে সেভ করো”। এরপর স্বামী র্য়াহানুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি জানান উপরের তলায় উঠে যাও। কিছুক্ষন পর সে তার বাবাকে ফোন করে জানায়, বাবা আমি আগুনে পুড়ে মরে যাবো আমাকে বাচাঁও। এরপর তাকে সেখান থেকে কোনো ভাবেই বের করা সম্ভব হয়নি। বিকেলে তার শরীর ঝলসানো অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নিয়ে যাবার কিছু পর মিথি মারা যায়। তার পরিচয়পত্র দেখে মরদেহ সনাক্ত করার পর কতৃপক্ষ পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করেন। বড়চাচা সালাউদ্দিন সরদার আফসোস করে বলেন মিথি তার স্বামীকে সহায়তা করার জন্য এবং আগামী দিন গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে তোরার জন্যই চাকুরি নিয়ে ছিল কিন্ত সেই চেষ্টা আর সম্পন্ন হলো না। এদিকে ফোন পাওয়ার সাথেই মিথির বাবা মাসুদুর রহমান বাস ধরে ঢাকায় ছুটেন। তিনি সান্তাহার থেকে ঢাকায় রাত ৯টার দিকে পৌছেন। ততক্ষণ তানজিলা মৌলি মিথি কুর্মিটোলা হাসপাতালে। তার লাশ নেবার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছে। 


মিথির বন্ধু তুলিকা ইমন বলেন অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারের সকালটাও সুন্দর ছিল মিথির। বাসা থেকেও বের হয়েছিল সন্ধ্যায় কাজ শেষে ফিরবে বলে। মিথি নিজেও জানতো না, সুন্দর সকালটা সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়ায় পরিণত হবে। বাবা তাকে নিতে আসবে শেষবারের মতো। যে বাবা তার প্রতিটি পরিক্ষায় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন, যে বাবা মিথির বাসায় আসতে একটু দেরি হলে ছুটে গেছেন যেখানে আছে সেখান থেকে নিতে। সে বাবা আজও এলো তাকে নিয়ে যেতে। ততক্ষনে অনেক দেরী হয়েগেছে। তুলিকা ইমন বলেন মিথির কথা মনে করে আমি সারা রাত কান্না করেছি। ঘুমোতে পারিনি। মিথির এই মৃত্যু কোনভাবেই মানতে পারছি না। শুধু আমি কেন আমরা তার পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন ও সান্তাহারবাসীও তার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। 
তার লাশ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সান্তাহারে এসে পৌছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে পরিবারে বইছে শোকের মাতম। 


পাড়া-প্রতিবেশীরা বলছেন কি নিয়ে বাঁচবে ওর বাবা-মা। সন্তান তো একটাই তাদের। আর কি থাকলো। নিহত মিথির মা নাসরিন সুলতানা ফেন্সী বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই প্রলাপ বকছে। তিনি বলেন এখন আমাকে আম্মা বলে কে ডাকবে? আমারতো আর কেউ রইল না। এদিকে বাবা একম্াত্র সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।


মিথির প্রতিবেশি লিটন ও শুভ জানান, মিরপুর রাত ১২টায় প্রথম নামাজে জানাজা শেষে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বশিপুর নিজ গ্রামে মরদেহ নিয়ে আসার পর বাদ জুম্মা বাবলুর চাতালে মরহুমার ২য় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।


তানজিলা মৌলি মিথি ২০০৯ সালে সান্তাহার সরকারি হার্ভে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে সান্তাহার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএ করেন। পরে ওই টাওয়ারের ১০ তলায় হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস প্রতিষ্টানে চাকুরী নেন।