মর্মান্তিক!

ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রী ও সন্তানসহ কৃষকের আত্মহনন

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০১৯ ১১:২৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৪৪ বার।

ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে নওগাঁয় এক ব্যক্তি নিজে বিষ মিশ্রিত দই খাওয়ার পর তার স্ত্রী এবং তিন বছরের সন্তানকেও জোর করে তা খাইয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা তিনজনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। তারা হলেন: জেলার মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের চকযুথী গ্রামের কৃষক অর্জুন সরকার (৩০), তার স্ত্রী তিথী রাণী সরকার (২৩) ও ছেলে অনন্য সরকার। 
শুক্রবার রাতে বিষ মিশ্রত দই খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ শনিবার সকালে তাদের লাশ নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ওই ঘটনায় একটি অস্বাভাভিক মৃত্যু বা আননেচারাল ডেথ (ইউডি) মামলা হয়েছে। এর আগে তাদের তিনজনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এলেও কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন শুধু বলা হয়েছিল দই খেয়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, পেশায় কৃষক অর্জুন সরকার এলাকার বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাক্তির কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছিলেন। এরই এক পর্যায়ে অর্জুন শুক্রবার সন্ধ্যার আগে হাট থেকে দই কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর তাতে বিষ মাখান। রাত ৮টার দিকে রাতের খাবারের পর অর্জুন নিজে বিষ মাখানো দই খান এবং পরে তার স্ত্রী ও সন্তানকেও জোর করে খাইয়ে দেন। এর পরপরই বিষক্রিয়ায় তারা ছটফট করতে থাকেন। গোঙানির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তবে অবস্থার অবণতি হওয়ায় পরে অর্জুন সরকারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তিন বছর বয়সী ছেলে অনন্য সরকারকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত তিনটার দিকে প্রথমে অর্জুন এবং তার সন্তান অনন্য সরকারের মৃত্যু হয়। শেষে মহাদেবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন স্ত্রী তিথী রাণী সরকারও মারা যান।
মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আকতারুজ্জামান আলাল জানান, তিনজনেরই বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা চলাকালে অর্জুন সরকারের স্ত্রী তিথী রাণী সরকার জানিয়েছিলেন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পের তার স্বামী প্রথমে নিজে বিষ মাখানো দই খান এবং পরে জোর করে তাকে ও তাদের সন্তানকেও খাওয়ান। একই পরিবারের ৩ সদস্যের এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের কান্না যেন থামছেই না।
মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, খবর পাওয়ার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তিনি বলেন, ‘অর্জুন সরকার তার স্ত্রী ও সন্তানকে জোর করে বিষ খাওয়াইছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’