‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হোক দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে’ দাবীতে নাগরিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

প্রেস রিলিজ
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২২৯ বার।

’মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হোক দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে’ শীর্ষক এই প্রতিপাদ্য নিয়ে  শনিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গিয়াস উদ্দিন মিলকি অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী নাগরিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম, ইয়ূথ এগেইনষ্ট হাঙ্গার ও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড সহ ১৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ আয়োজনে উক্ত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৪টি অধিবেশনে সুশীল সমাজ, যুব সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিসহ প্রায় ২ শতাধিক অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে।  
সকাল ১০ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রত্যাশা ২০২১ ফোরামের সভাপতি এস এস আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্ক এর সভাপতি মহিদুল হক খান, প্রত্যাশা ২০২১ ফোরামে সদস্য সচিব রুহি দাস এবং সহ-সভাপতি শামসুন্নাহার কোহিনুর। সম্মেলনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন। অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে আতাউর রহমান মিটন ২০২১ সালের মধ্যে কিভাবে আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারি এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। 

‘২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূলে আরও কী করা দরকার?’ আলোচ্য বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন সময়ের দাবি এর সম্পাদক রেজাউল করিম হাশমী। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন, শিসউকের নির্বাহী পরিচালক শাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ, পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিন মেধা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সভাপতি সদরুল আলম হারুন, সাবেক সাংসদ তাসমিন রানা ও রফিকুল ইসলাম। 
‘দারিদ্র্যম্ক্তু বাংলাদেশ: যুব সমাজের চোখে’ শীর্ষক প্রতিপাদ বিষয়ে তৃতীয় অধিবেশনে গাজী আনিকা আসলামের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইয়ূথ এগেইনস্ট হাঙ্গারের সভাপতি শাহরিমা জান্নাত ঐশি। অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুবদের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী রানা, গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডঃ মোঃ গোলাম সামদানী ফকির, হাঙ্গারর ফ্রি ওয়ার্ল্ড, জাপানের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আকিকো মেরা, নিরাপদ নিউজ ও নিরাপদ সড়ক চাই এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল মঈন।
সম্মেলনের সমাপনি অধিবেশনে সাবেক মন্ত্রী এবং মহান সংবিধান রচয়িতা কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ নিয়ে সম্মেলনের ঘোষনাপত্রটি পাঠ করেন। উক্ত ঘোষনা পত্রে মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপ করে সকল নাগরিকের সুষম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহবান জানিয়ে ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় যা পরবর্তিতে সরকারের কাছে তুলে দেয়া হবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সুপারিশসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো।

১.    জনগণের অনগ্রসর অংশ তথা দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নকে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার’ হিসেবে বিবেচনা করা হোক;
২.    জাতীয় অগ্রাধিকার এর আলোকে দেশের সকল সরকারী-বেসরকারী ও উন্নয়নশীল সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সমন্বয়ে সর্বস্তরে ‘দারিদ্র্য নির্মূল বিশেষ কর্মসূচী’ (ক্রাশ প্রোগ্রাম) গ্রহণ করা হোক;
৩.    ইউনিয়নভিত্তিক দারিদ্র্য নির্মূল পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক;
৪.    দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে নিজ নিজ এলাকায় হতদরিদ্র ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে তা সংশ্লিষ্ট এলাকাভিত্তিক ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হোক;
৫.    সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর পরিধি ও পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করে হতদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষদের সহায়তা বাড়ানো হোক;
৬.    খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসহ সকল মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় সহায়ক আইন প্রণয়ন করা হোক;
৭.    আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক গ্রামীণ উদ্যোগগুলিতে ৫% সুদের নীচে ঋণ সহায়তা সহজলভ্য করা হোক;
৮.    বিভিন্ন পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারী উদ্যোক্তা তৈরীতে সহায়তা আরও জোরদার করা হোক;
৯.    যুব সমাজের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক;
১০.    সমতলের আদিবাসী, দলিত, চা শ্রমিক, হরিজন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে এমনভাবে কর্মসূচী গ্রহণ করা হোক যাতে তারা কোন বিপত্তি ছাড়াই প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ ও জীবনমানের উন্নতি করতে পারে;
১১.    প্রত্যেক এলাকায় বঙ্গবন্ধু’র জন্মশতবার্ষিকী ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি গঠন করে সেই কমিটিকে দারিদ্র্য নির্মূল কর্মসূচীর মনিটরিং এর দায়িত্ব দেয়া হোক;
১২.    উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষা এবং তথা প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক; 
১৩.    দারিদ্র্যমুক্ত ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা বৃদ্ধি করা হোক;
১৪.    দারিদ্র্য নির্মূল কর্মসূচীতে সহায়তাদানকে ‘ট্যাক্স রিবেট’ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হোক;

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফুটো পাত্র দিয়ে পানি সেচলে যেমন ফল হয় না, ঠিক তেমনি পুরনো, গতানুতিক, উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া চিন্তা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।  টেইসইভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে চাইলে দরিদ্র মানুষদেরই দায়িত্ব দিতে হবে। তাদের কথা হৃদয় দিয়ে শুনতে হবে, সক্ষমতা বাড়াতে হবে, তাদের সহযোগিতা করতে হবে আন্তরিকতার সাথে। মানুষের মনে ভরসা জাগিয়ে তুলতে হবে। লুটপাট ও অনিয়ম রোধ এবং সরকারী কর্মসূচীগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, তথা ‘প্রকৃত সেবাগ্রহিতা’ চিহ্নিত করে সেবাদান করা হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। 
ভিক্ষা দিয়ে ভিক্ষুক বানানো যায়, দারিদ্র্য দূর করা যায় না। আমরা সরকারের শুভ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করি। প্রত্যাশা করি, সরকার খোলামন নিয়ে নাগরিক সমাজের সুপারিশগুলো বিবেচনা করবেন।