বাবা’র কোলে পরীক্ষা কেন্দ্রে অদম্য নাইছ !

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. ধুনট (বগুড়া)
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৯৬ বার।

দু’টি পা আছে, কিন্তু হেটে চলার শক্তি নেই প্রতিবন্ধী নাইছ আকতারের (১৭)। দু’টি হাত থাকলেও, তার ডান হাতটি প্রায় অচল। তবুও অদম্য শিক্ষা শক্তি লালন করে প্রতিবন্ধী এই তরুণী। বাবার কোলে করেই পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে তাকে, লিখতে হয়েছে বা’হাতে। সোমবার ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে প্রতিবন্ধী নাইছ আকতার। 

চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। আকতার জাহান গৃহিনী। এই দম্পত্তির ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। জন্ম থেকেই শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধি। নজরুল ইসলাম ও আকতার জাহান দম্পত্তির এই কন্যা শিশু নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় ডান হাতটিও অচল। ওই দম্পত্তি তাদের এই শিশু’র নাম রাখেন নাইছ আকতার। বিশ্বাস থেকেই প্রতিবন্ধি এই শিশুর মাধ্যমে সুন্দর কিছু বিকাশের স্বপ্ন ছিলো ওই দম্পত্তির। বেড়ে ওঠার সাথে লেখাপড়ার প্রতি তার আকর্ষন সৃষ্টি হয়। বাবা-মা’র কোলে করেই বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করেছে সে। নাইছ আকতার ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ৩.৬৭ এবং ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তি বিশ্বহরীগাছা-বহালগাছা বহুমূখী মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে সোমবার ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে নাইছ আকতার।

বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমূখী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও নাইছ আকতার বাবা-মা’র কোলে করে নিয়মিত কলেজে আসতো। সে অত্যন্ত মেধাবী, লেখাপড়ার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ রয়েছে। আশা করছি এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতীর্তের সাথে উত্তীর্ণ হবে। 

অদম্য নাইছ আকতার জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। লেখাপড়া শেষে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। এক প্রশ্নের জবাবে নাইছ জানায়, এইচএসসি’র বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা ভাল হয়েছে। 

নাইছ আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারনে আমরা তার স্বপ্নপুরণ করা চেষ্টা করছি। উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে একদিন সে আমাদের মুখ উজ্জল করবে। তবে প্রতিবন্ধী নাইছের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টিআইএম নূরুন্নবী তারিক জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী নাইছ বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে।