শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ

শেরপুরে আলিম পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে ৪৫০টাকা

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৪ বার।

শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে বগুড়ার শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়ার নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়া ও কেন্দ্রে রকমারি ব্যয়ের খাত দেখিয়ে আলিম পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪১০টাকা থেকে ৪৫০টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও তার পছন্দের শিক্ষকদের একটি চক্র প্রত্যেক পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে এসব টাকা উত্তোলন করেন। প্রকাশ্যে ওই চক্রটির প্রবেশপত্র বাণিজ্যে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।


সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়,সোমবার (০১এপ্রিল) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম ও কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা একযোগে শুরু হয়েছে। এই উপজেলায় মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষা শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও উপজেলার জামুর ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসা, আলতাদীঘি ফাজিল মাদ্রাসা, উলিপুর আমেরিয়া সমতুল্ল্যাহ মহিলা মাদ্রাসা ও ঘৌরদৌর আলিম মাদ্রাসার মোট ১৭১জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এসব পরীক্ষার্থীর প্রত্যেকের নিকট থেকে প্রবেশপত্র বিতরণকালে ৪১০টাকা থেকে ৪৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এক্ষেতে দরিদ্র-গরীব মেধাধি শিক্ষার্থীরাও ছাড় পাননি। অথচ শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় পরীক্ষার্থীদের কাছ কোন প্রকার টাকা নেয়া যাবে না। কিন্তু এসব নির্দেশ উপেক্ষা করে এই প্রবেশপত্র বাণিজ্য করা হয়।
নাজমুল হক, বকুল হোসেন, আলমাছ, মোজাহিদুল ইসলাম, মনিরা খাতুনসহ একাধিক পরীক্ষার্থী জানায়, আমরা জানি পরীক্ষার ফরম পুরণের সময় কেন্দ্র ফিসহ সকল টাকা পরিশোধ করে নেয়া হয়েছে। এজন্য ফরম পুরণের বোর্ডের নির্ধারিত ১৩০০টাকার স্থলে ২৮০০ টাকা দিয়েছি। এখন প্রবেশপত্র আটকে ফের টাকা নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে বিশেষ সুবিধা দেয়াসহ কেন্দ্রে নানা রকম ব্যয় করতে হয় বলে তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে তারা বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া অনেকটা জোরপূর্বকই তাদের কাছ থেকে এই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
আলমাছ হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক অভিভাবক জানান, তার ছেলের জন্য প্রবেশপত্র নিতে উক্ত পরিমাণ টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তার কাছে ২০০টাকা আছে। এই টাকা নিয়ে প্রবেশপত্র দেয়ার জন্য আলিয়া মাদ্রাসার অফিস সহকারিকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে জানিয়ে দেয়া হয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ৪১০টাকার চেয়ে কম নেয়া সম্ভব নয়। পরে ধারকর্য করে সেই টাকা পরিশোধ করে প্রবেশপত্র নিয়ে তার ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে তিনি জানান। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব পত্রিকায় লিখে কি লাভ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা ব্যক্তিরা সবই জানে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেয় না। তাই এসব আর বলতে চাই না।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাওলানা আব্দুল হাই টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ফরম পুরণের সময় কেন্দ্র ফি নেয়া হয়নি। তাই এখন সেই টাকা নেয়া হচ্ছে। এরবেশি কিছু আমি জানি না। কারণ এই কেন্দ্রের সচিব হাফিজুর রহমানের ছেলে পরীক্ষা দেয়ার কারণে আমি কেবল তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তাই সব কিছু তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ টাকা নেয়া হলে অবশ্যই রশিদ দিতে হবে। রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলন করা বৈধ হবে না। তাই খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। কেন্দ্র ফি হিসেবে এসব টাকা তুলেছেন বলে জানান। এরপরও খোঁজখবর নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।