খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে
বগুড়ার তালোড়ায় অবহেলিত মায়েদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করছেন আউলিয়া
মিষ্টি রহমান
সন্তানদের অবহেলার শিকার মায়েদের দেখ-ভালের জন্য বগুড়ার তালোড়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে ‘মা আমার মা’ নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৪ তলা বিশিষ্ট এ বাড়িতে অন্তত ২০ জন মা বসবাসের সুযোগ পাবেন। স্থানীয় লাফাপাড়া মহল্লায় বাড়িটি নির্মাণ করছেন শেখ আউলিয়া নামে এক নারী।
ব্যতিক্রমী ওই বাড়িটিতে মায়েদের জন্য তিন বেলা খাবার ছাড়াও তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিশেষ খাবারও পরিবেশন করা হবে। এর পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা এবং নিয়মিত চিকিৎসা সেবার সব ব্যবস্থা থাকবে। শুধু কি তাই! যাদের অবহেলায় বাড়ি-ঘর ছাড়তে হয়েছে সেই সন্তানরা দূরে থাকায় যাতে গর্ভধারিনীদের মন না কাঁদে, সেজন্য বছরে একবার মায়েরা সন্তানদের ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে আদর-আপ্যায়ন এমনকি তাদের উপহার দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
গত ১৭ মার্চ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘মা আমার মা’ বাড়িটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন শেখ আউলিয়া। দুই সন্তানের জননী আউলিয়ার স্বামী আব্দুল জলিল খন্দকার পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ইতিপূর্বে তালোড়া পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনের সময় স্বামীর পক্ষে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ করে প্রথম আলোচনায় আসেন শেখ আউলিয়া। ইতিপূর্বে তিনি এলাকার গরিব মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, বোরখা ও হিজাব প্রদান, পড়ালেখার খরচ যোগানো এবং অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সমাজসেবামূলক নানা কাজ করেছেন। এবার অবহেলিত মায়েদের জন্য বাড়ি নির্মাণে স্বামী কিংবা শ্বশুর বাড়ির কারও কোন সহায়তা নিচ্ছেন না তিনি। বরং বাবার কাছ থেকে পাওয়া নিজের তিন শতাংশ জমির ওপরই বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন। তার ধারণা চলতি বছরের মধ্যেই ভবনের অর্ধেক নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং সেখানে অন্তত ১০জন মাকে রাখা যাবে।
অবহেলিত মায়েদের জন্য বাড়ি নির্মাণের কারণ জানাতে গিয়ে শেখ আউলিয়া বলেন, ‘মায়েদের সম্মান অনেক উঁচুতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন কোন সন্তান মায়েদেরকে যথাযথ সম্মান দেন না। এমনকি তিন বেলা খাবার দিতেও তাদের অনীহা। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা নিজের চোখে দেখার পর সন্তানদের অবহেলার শিকার মায়েদের নিয়ে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা জাগে।’ নিজের জমানো টাকায় বাড়িটি নির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগের সঙ্গে আমার মা শেখ রওশন আরা এবং বড় বোন শেখ রায়হানা পারভীনও যুক্ত হয়েছেন।’
বাড়িটি নির্মাণ এবং সেখানে যারা বসবাস করবেন সেই মায়েদের খাবার এবং চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে অন্য কারো সহায়তা নেওয়া হবে কি’না-এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ আউলিয়া বলেন, ‘যদি কেউ মায়েদের সেবার নিয়তে স্বেচ্ছায় সহায়তা করতে চান, তাতে আমরা আপত্তি করবো না। এমনকি কেউ যদি প্রতিদিন এক টাকা হিসেবে বছরে ৩৬৫ টাকাও দান করতে চান আমরা সেটা নিব কিন্তু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যদি কেউ লাখ টাকাও দিতে চান তাহলে আমরা সেটা গ্রহণ করবো না।
‘মা আমার মা’ নামে নির্মিতব্য বাড়িটিতে মায়েদের তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি যদি তাদের কোন বিশেষ খাবার খেতে ইচ্ছে করে সেটিও দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য সেবায় একজন চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবেন, যিনি প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেক মায়ের খোঁজ-খবর নিবেন এবং কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা করবেন। বাড়িটিতে আপাতত তালোড়াসহ দুপচাঁচিয়া উপজেলা এলাকায় অবহেলিত মায়েদেরকেই বসবাসের সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ আউলিয়া বলেন, ‘আমরা আপাতত ছোট আকারে শুরু করেছি। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরিসরটিকে বড় করার। আমরা জরুরী মুহুর্তে সকল মায়েদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করতে চাই।’