এক দম্পতির নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে

‘জ্বিনের বাদশা’ এবার বগুড়ার শাজাহানপুরে!

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৪৬ বার।

জন্মভূমি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ছেড়ে ‘জ্বিনের বাদশা’ এবার বগুড়ার শাজাহানপুরে ‘বাদশাহী’ করতে চাইছে! স্থানীয় এক দম্পতির নগদ অর্থ এবং তাদের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এমন গল্প ডালপালা মেলেছে। ‘জ্বিনের বাদশা’র হুকুম তামিল করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেওয়া স্বর্ণালংকারের মূল্য পরিশোধ করার জন্য সেই দম্পতিকে ্এখন জমি বিক্রি করতে হচ্ছে।

‘জ্বিনের বাদশা’র আবির্ভাবঃ শাজাহানপুর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের রমজান আলী পলাশ জানান, গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ একটি মোবাইল ফোন থেকে ভরাট কণ্ঠে কেউ একজন নিজেকে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে তাকে ও তার স্ত্রীকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে বলে। পাশাপাশি তাদেরকে হাঁড়ি ভর্তি স্বর্ণ পাইয়ে দেওয়ারও প্রলোভন দেয়। এরপর সে মসজিদে জায়নামাজ দান করতে হবে বলে বিকাশের মাধ্যমে ওই দম্পতির কাছে কিছু টাকা দাবি করে। তারা সরল বিশ্বাসে ‘জ্বিনের বাদশা’র দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠান। এভাবে কিছুদিন বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পর একদিন সে ওই দম্পতিকে বেশি বেশি স্বর্ণালংকার যোগাড় করতে বলে। প্রয়োজনে বিয়ের কথা বলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার সংগ্রহের নির্দেশ দেয় সে।
‘জ্বিনের বাদশা’র নির্দেশ অনুযায়ী পলাশ-মনিকা দম্পতি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলার কাছ থেকে প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালংকার সংগ্রহ করেন। বিষয়টি জানার পর ‘জ্বিনের বাদশা’ ওই দম্পতিকে জানায়, মাঝিড়া চেকপোস্টের কাছে বৈদ্যুতিক একটি খুঁটির কাছে স্বর্ণের মূর্তি রাখা আছে। সেটি তাদেরকে নিয়ে আসার জন্যও বলা হয়। তার কথা মত ওই দম্পতি গত রোববার সেখানে গিয়ে চিপস্-এর প্যাকেটে মোড়ানো একটি স্বর্ণের পুতুল পান। সেটি হাতে নেওয়ার পর পরই ‘জ্বিনের বাদশা’ তাদেরকে ওই প্যাকেটে রাখা জিনিসটি একবারের বেশি দেখতে নিষেধ করে।

‘জ্বিনের বাদশা’র কথা অনুযায়ী ওই দম্পতি পুতুলটি লুকিয়ে রাখে এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেওয়া স্বর্ণালংকারগুলো তাদের বাড়ির অদূরে ডাঙ্গার পার নামে একটি স্থানে শিমুল গাছের নিচে রেখে। এরপর সেই ‘জ্বিনের বাদশা’র নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দম্পতি পরদিন দুপুরে অন্যের কাছ থেকে ধার করা ১০হাজার ২০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। তবে তার পর থেকে ‘জ্বিনের বাদশা’র মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পলাশ-মনিকা দম্পতির সন্দেহ হয়। তখন তারা ‘জ্বিনের বাদশা’র দেওয়া চিপসের মোড়ক খুলে তার ভেতরে থাকা মূর্তিটি পরীক্ষা করে দেখে সেটি সিসার তৈরি। প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা তাদের স্বর্ণালংকারগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য ওই দম্পতির ওপর চাপ দিতে শুরু করে।
প্রতারিত রমজান আলী পলাশের বাবা আকরাম হোসেন জানান, তার ছেলে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তার মতে এলাকার কেউ না কেউ ওই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার ছেলের বোকামির কারণে প্রতিবেশীরা স্বর্ণালংকার হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাই আমি আমার জমি বিক্রি করে হলেও তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ এব্যাপারে থানায় কোন মামলা করবেন কি’না জানতে চাইলে আকরাম হোসেন বলেন, ‘মামলা করলে হয়তো আমার ছেলের ক্ষতি করা হতে পারে। তাই আমি সেদিকে যাব না।’