নির্ধারিত পদের তুলনায় অতিরিক্ত জনবলই সমস্যা

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের ৪৫ সদস্য ৩ থেকে ৬ মাস বেতন পাচ্ছেন না

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৭৭ বার।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের ৪৫ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কনস্টেবল থেকে অ্যাসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) পদ মর্যাদার এসব সদস্যের কারো ৩ মাস আবার অনেকের ৬ মাস বেতন ধরে বেতন নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঞ্জুর করা (নির্ধারিত) পদের তুলনায় অতিরিক্ত জনবল চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই বেতন নিয়ে এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।
সরকারি চাকরি করেও মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় মহাসড়কের নিরাপত্তায় গঠিত পুলিশের এই ইউনিটের সদস্যরা আর্থিকভাবে চরম সংকটে পড়েছেন। অনেকের জমানো টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক চিঠি চালাচালি হলেও হতভাগ্য ওই পুলিশ সদস্যদের ভাগ্যে বেতন জুটছে না। 
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত জনবল হিসেবে চিহ্নিত এসব সদস্যকে শূণ্য পদের বিপরীতে অন্য কোথাও বদলী না করা পর্যন্ত তাদের বেতন সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু অতিরিক্ত সেই জনবল কবে নাগাদ বদলী হবে সে সম্পর্কে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের কোন কর্মকর্তাই নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেন নি।
মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ২০০৫ সালের মে মাসে পুলিশ বাহিনীতে ‘হাইওয়ে পুলিশ’ নামে পৃথক একটি ইউনিট চালু করা হয়। শুরুতে একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে (ডিআইজি) প্রধান করে দেশের ৬৪টি জেলাকে ‘পূর্বাঞ্চল’ ও ‘পশ্চিমাঞ্চল’ নামে দু’ভাগে ভাগ করে দু’জন পুলিশ সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২৭টি জেলার মহাসড়কে নিরাপত্তায় পূর্বাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার কার্যালয় স্থাপন করা হয় কুমিল্লায়। আর ৩৭টি জেলার মহাসড়ক দেখ-ভালের জন্য পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ের পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় বগুড়ায়। তবে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে হাইওয়ে পুলিশকে আবার কুমিল্লা, বগুড়া, ফরিদপুর ও গাজীপুর-এই চারটি রিজিয়নে ভাগ করে প্রতিটিতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে একজন করে পুলিশ সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিওনে কনস্টেবল থেকে পুলিশ সুপার পর্যন্ত মোট ৫৬৫টি পদ মঞ্জুর করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০৩টি পদ রয়েছে কনস্টেবলের। এর বাইরে একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দু’জন সহকারি পুলিশ সুপার ও ৭টি ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে। বাদবাকী ১৫১টি পদ রয়েছে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) ও অ্যাসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টরের (এএসআই)।
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে কনস্টেবল থেকে পুলিশ সুপার পর্যন্ত মোট ৫৬৫টি পদ থাকলেও বর্তমানে জনবলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১০ জনে। বাড়তি ৪৫ সদস্যের মধ্যে এএসআই রয়েছেন ৮জন বাদবাকি সবাই কনস্টেবল। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অথবা হাইওয়ে পুলিশেরই অন্য কোন রিজিয়ন থেকে বিভিন্ন সময় ওই ৪৫জনকে বগুড়ায় বদলী করা হয়েছে। গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেই মূলত এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক জনবল বদলী করা হয়। তবে এর আগে এবং পরেও অনেককে বদলী করা হয়েছে। বদলী হয়ে আসা এসব পুলিশ সদস্যই বর্তমানে বগুড়া রিজিয়নে ‘অতিরিক্ত জনবল’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন এবং তারাই বেতন পাচ্ছেন না।
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নে কর্মরত এক সদস্য জানান, অন্য রিজিওনের মত বগুড়াতেও শুধু মঞ্জুর করা বা নির্ধারিত জনবলের জন্যই প্রতিমাসে বেতন-ভাতা বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে যারা অতিরিক্ত জনবল হিসেবে বিবেচিত হন তারা বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অতিরিক্ত ওই জনবলকে অন্য কোথাও শূন্য পদের বিপরীতে বদলী না করা পর্যন্ত তারা বেতন পাবেন না।
হাইওয়ে পুলিশের অন্য একটি রিজিওন থেকে বদলী হয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, তিনি জানুায়ারি মাসে বগুড়া রিজিয়নে বদলী হয়ে আসার পর থেকে বেতন পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মত যারা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বদলী হয়ে এসেছেন তারাও অতিরিক্ত জনবল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন এবং বেতন পাচ্ছেন না। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় আমাদের এখন আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-কর্য করে চলতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিবার কথা বলেও কোন কাজ হচ্ছে না।’
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অতিরিক্ত জনবল হিসেবে বিবেচিত কিছু সদস্যের বেতন নিয়ে সমস্যা হয়েছে তবে এটি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘তাদেরকে শূন্য পদের বিপরীতে অন্যত্র বদলীর মাধ্যমে সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশাকরি এই সমস্যা আর বেশিদিন থাকবে না।’