রেশমা [চতুর্দশ পর্ব]

সাজিয়া আফরিন সোমাঃ
প্রকাশ: ১৫ অগাস্ট ২০১৮ ১৪:২৮ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৫১১ বার।

বড় মা মারা যাবার পর বাড়িতে দাদাী,হাস্না নানী,রেশমা আর হেদায়েতের বউ বাচ্চারা থেকে গেলো।

ছেলে,ছেলের বউ এর শোকে লাইলী তখন পুরাপুরি বিছানায়। মাঝে মাঝে হাস্না নানীর সাথে বের হয়ে দূর থেকে কবর দেখে।

সুফিয়ার নতুন সংসারে রেশমাকে নিয়ে যেতে চাইলেও লাইলী নাতনীকে ছাড়তে রাজি ছিলো না। কিন্তু ছেলে,ছেলের বউ এর শোকও বেশীদিন কাটাতে পারেনি লাইলী। ছয় মাস যেতে না যেতেই একদিন লাইলীও চলে গেলো সব ফেলে।

রেশমা এবার কার কাছে যাবে এ নিয়ে শুরু হলো সবার ভিতর কাড়াকাড়ি,ঝগড়া। নানা, মামারা তো সব সময় তাকে নিতেই চেয়েছে। সুফিয়া- দেলোয়ার তারাও চায় রেশমাকে,দুলু ফুপু এসে গেছে তাকে নিতে,আর তাশলী? সেতো শুধু নিজে না তার মেয়েদের দিয়েও রেশমাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। ছোট্ট রেশমা জানেনা কেনো এতো কাড়াকাড়ি তাকে নিয়ে?

তাশলী বলছিলো- রেশমা তুই আমার কাচে থাক মা,তালে তোর দাদী,বাপ,মা এর কবর মন চ্যালেই দেকপ্যার পারবু। তোর বাপ-মা এর কত আদরের ছোল তুই। বাড়ি ছ্যাড়া যাবু এই বাড়ি তকন ভুতের বাড়ি হয়্যা যাবি। তুই এটি থাক তালে তোর মাও খুশি হবি।

আর মামার কাছে যাবু মামীরা কয়দিন পর আর দেকপেনা,বিরক্ত হবি।

নানা কয়দিন বাঁচপে? তকন কি করবু?

আর তোর মা সুফিয়ার এর নতুন সংসার সেটি গেলে তোক তোর মা বেশী ভালোবাসবে তকন তোর নতুন বাপ তার ছোলগুলার জন্যি মন খারাপ করবি। তকন তোর মা এর আর সুখ হবি না। আর তোর মাও তোক যদি ভালোই বাসলোনি ত্যালে কি তোক থুয়্যা এই ভিটা মাটি থুয়্যা কি বিয়া করতো? তোর মা খালি তার লিজের কতাই ভাবিছে। লিজের সুক খুঁজিচে! সেটি আর তুই যাবু ক্যা। এই বাড়ি, ঘর সব তোর, তুই এটিই থাক আমার কাচে।

ছোট্ট রেশমার মনে অনেক চাপ! একদিকে বড় মা এর ইচ্ছা,অন্যদিকে ছোট মা তাকে নিয়ে যেতে চায়,আবার সে গেলে সংসারে সুখ হবে না? আর সত্যিই তো ছোট মা তাকে ছেড়ে আবার অন্য জনের মা হয়ে গেছে। রেশমা সেখানে কি করে যাবে?

কি করবে বাচ্চা মেয়েটা। মনটা তার কষ্টে ভরে উঠে। অভিমান হয় সবার উপর। শুধু হাস্না নানীই এখনও কথা রেখেছে। যদিও সে যেখানেই যাবে হাস্না নানীকে সাথে নিবে। কারন বড় মা বলতো- "নানী তুমি যতদিন বাঁচবা আমার সংসারেই থাকবা।"

তাহলে রেশমা তাকে যেতে দিবে কি করে? তাই তো সব সময় সে হাস্না নানীর কোল ঘেসে থাকতে চাইছে। এদিকে চলছে তাকে নিয়ে তর্ক,কথা,আলোচনা। সব রেশমা আর তার জমি,সম্পত্তিতে নিয়ে।

রেশমা শুধু মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে সে কোথায় থাকবে?!

সুফিয়ার নতুন সংসারে বরি আর রাশেদ দুই সন্তান ছিলো,এবার নতুন অতিথি এসেছে সুফিয়ার কোন জুড়ে। রেশমাকে ছেড়ে আসার পর সুফিয়ার জীবনটা একেবারে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। সে ভাবতেও পারেনি তার এই নতুন করে বিয়ে রেশমাকে এতো বেশী আঘাত দিবে। তার প্রতি রেশমার এতো ঘৃনা জন্মাবে।রেশমার ছোট্ট মনে তার মা এক স্বার্থপর মহিলা হয়ে জায়গা নিয়েছে।

সুফিয়া অনেক চেষ্টা করেছিলো রেশমাকে নিজের কাছে  আনতে কিন্তু রেশমা কোন ভাবেই রাজি হয়নি তার মা র কাছে যেতে। বরং সে তার কোন কথা শুনতেই রাজি না। সুফিয়া নতুন সংসারে তাই কোন ভাবেই মন দিতে পারছিলোনা। মাঝে মাঝে রেশমাকে দেখতে যেতো,কিন্তু ছোট্ট রেশমা তার মার কাছে থেকে দূরে দূরে থাকতো। তাশলী যে তাকে খুব ভালোবাসে তা না,তারপরেও তার মা এর চেয়ে তো ভালো সে!

সুফিয়া এবার তার নিজের সন্তান রফিক কে পেয়ে অনেকটা ব্যস্ত হয়ে যায়। রেশমাকে বার বার তার নতুন বাবা নিতে গিয়েও ফিরে এসেছে। ছোট্ট একটা মেয়ের এমন কঠোরতা দেখে সত্যিই সুফিয়া অবাক হয়!! সে বোঝে তাশলী মেয়েটার মনে এমন কিছু ঢুকিয়েছে যার ফলে মেয়েটা তার মাকে ঘৃনা করে। দেখতে দেখতে সুফিয়ার ঘরে আরো ৫ সন্তানের জন্ম হয়। এর মাঝেই বড় ছেলে রফিক পানিতে ডুবে মারা যায়।

সন্তানদের নিয়ে সুফিয়া যখন তার বাবার বাড়ি যেতো,তখন তার ভাই রা রেশমাকে তার নানা বাড়ি নিয়ে যেতো। রেশমা নানা বাড়ি এসে ভাই বোনদের সাথে দেখা করতো। কিন্তু কখনই মা এর নতুন সংসারে যেতো না। রেশমা যত বড় হতে থাকে তার ব্যক্তিত্ব আর মনোবলের কারনে সাবার প্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।

সামনে রেশমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা,এরকম সময় সুফিয়ার স্বামী দেলোয়ার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বিছানা নেয়। বাঁচার তেমন কোন সম্ভাবনা নাই। রেশমাকে খবর দেওয়া হলো- দেলোয়ার রেশমার সাথে দেখা করতে চায়। এই রকম অবস্থায় রেশমা আর না করতে পারেনি। এবার রেশমা প্রথম বারের মতো যাচ্ছে তার মা'র সংসারে। (চলবে)