নুসরাতের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বগুড়ায় বাম সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৩০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১৭ বার।

মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ন এবং আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবার বগুড়ায় একাধিক সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। 
শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় সকাল ১১টার দিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। বিকেল ৫টায় ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ওই দু’টি কর্মসূচীর পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়। সংগঠনগুলো বগুড়ায় চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু হুমায়ারার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদেরও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা এবং তার শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের মৃত্যু এবং তার সাথে যা ঘটেছে তাতে পুরো দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কৃতি এবং শিক্ষকদের মন-মানসিকতা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে বগুড়ায় চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু হুমায়রার মৃত্যুর ঘটনাটি দেশে চিকিৎসা সেবার নামে যে ব্যবসা চলছে তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে গত ১০ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা গত ২৭ মার্চ ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। তার পর থেকেই দুর্বৃত্তরা অভিযোগটি তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। মৃত্যুর আগে নুসরাত তার গায়ে কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে সে সম্পর্কে জবানবন্দীও দিয়েছেন।
অপরদিকে বগুড়া শহরে মালেকা নার্সিং হোমে টনসিল অপারেশন করাতে এসে চিকিৎসকদের অবহেলায় গত ৮ এপ্রিল রাতে মারা যায় সাত বছরের শিশু হুমায়রা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হুমায়রাকে অপারেশনের জন্য প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কতিপয় দালাল ‘স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা’র কথা বলে তাদেরকে মালেকা নার্সিং হোমে নিয়ে যায়। ৮ এপ্রিল বিকেলে হুমায়রাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় এবং রাত ৯টায় ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অজ্ঞান অবস্থায় হুমায়রাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এ সময় অপারেশনের সমুদয় টাকাও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। তবে পরিবারের সদস্যরা হুমায়রাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, অনেক আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। পরে তারা মালেকা নার্সিং হোমে গেলে ততক্ষণে চিকিৎসক ও নার্সরা পালিয়ে যায়। হুমায়রার বাবা হারুণার রশিদ অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অবহেলায় তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকালে ছাত্রফ্রন্টের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মণ, সহ-সভাপতি পলাশ চন্দ্র বর্মণ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তা আক্তার মীম, বিপুল আহম্মেদ, রিতু খাতুন ও শাওন দেবনাথ। বিকেলে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন যুব ইউনিয়নের জেলা সভাপতি সাজেদুর রহমান ঝিলম, সহ-সভাপতি শুভ শংকর, সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ কবির খান পাপ্পু, শাপলা আকতার, সৈয়দ তৌহেব্বুল আলম সবুজ, সুকমল চন্দ্র দাশ, শফিকুল ইসলাম পলাম, বিজয় সাজা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নাদিম মাহমুদ,সহ-সভাপতি মিঠুন পাল, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, আকতারুজ্জামান টুটুল, বিপুল পাল, শিশির ইসলাম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জেলা সংসদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান, এস এম শাহিদুর রহমান বিপ্লব, আরিফুল হক খান, সুজন সরকার ও জুলফিকার রহমান।