শেরপুরে হয়ে গেল ২০০ বছরের প্রাচীন চড়ক উৎসব

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১৪ বার।

পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবারের মত এবারও বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় হয়ে গেল 'দুইশ’ বছরের প্রাচীন 'চড়ক উৎসব'। ফেলে আসা বছরের দুঃখ,গ্লানি মন্ত্রপাঠে বিদায় জানাতেই রোববার পৌরশহরের গোসাইকাচারী মাঠসহ একযোগে তিনটি স্থানে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। চৈত্রসংক্রান্তি নামে পরিচিত এ উৎসবটি অন্তত 'দুইশ’ বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই পালিত হয়ে আসছে বলে জানান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিমাই ঘোষ জানান। তৎকালিন সময় বান রাজা তাঁর মায়ের আদেশে এ পূজার প্রচলন শুরু করেন।  
 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে একটি গোলাকার গর্ত। আর সেই গর্তের পাশেই রাখা অন্তত ২০থেকে ২৫ফুট লম্বা একটি কাঠ। তখনও কাঠটি গর্তে পোতা হয়নি। কেননা গর্তের উপরিভাগে চাদর টানিয়ে ভেতরে সন্ন্যাসীরা পূজা আর্চনা আর মন্ত্রপাঠে ব্যস্ত। হঠাৎ গর্তের মুখ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলা হলো। বেরিয়ে এলেন সন্ন্যাসী বিরেন চন্দ্র সরকার। দুধ দিয়ে ধুয়ে দিলেন সেই কাঠটি। একটু পরে অনেকটা লাঙলের জোয়ালের মত আরেকটি কাঠ ওই কাঠের ওপর লম্বালম্বিভাবে বসিয়ে দেওয়া হলো। এরই মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হলো মাটি পর্যন্ত এক গাছ লম্বা দড়ি। শেষে সেই লম্বা কাঠটি মাঠের সেই গর্তে লম্বালম্বিভাবে পোতা হলো। আর এরপর শুরু হলো দমবন্ধ করা এক উৎসব। দড়ির একপ্রান্তে একদল মানুষের শক্ত হাত আর অপর প্রান্তে ভয়ঙ্কর সেই কীর্তিটা। যেখানে লাগানো থাকে বড় বড় দু’টো বড়শি। যা একজন মানুষ তার পিঠের চামড়ার সঙ্গে গেঁথে নিয়ে শূন্যে ঘুরতে থাকে। সেই সঙ্গে হাজারো দর্শক দমবন্ধ করে আকাশ পানে রুদ্ধশ্বাসে চেয়ে থাকে। আর এটাই হিন্দু সম্প্রদায়ের চড়ক মেলার উৎসবের মূল আকর্ষণ।

চড়ক উৎসবে আসা স্বপন ঘোষ এবং সুদেব চন্দ্র পালসহ একাধিক ভক্তবৃন্দরা জানান, ১০দিন আগে থেকেই চড়ক উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। ধর্মানুরাগী সন্ন্যাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৃত্যগীতের মাধ্যমে চড়ক পূজার জন্য ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। একদিন সারাদিন চলে উপবাস ও রাতে নিরামিষ ভোজ। চড়ক পূজার দুইদিন আগে হয় শ্মশান পূজা ও গৌরীর বিয়ে। গৌরীর নাচ, গান আর ঢাকের বাদ্যে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পরদিন হয় কালীনাচ। কালীনাচ শেষে ঢাকঢোল বাজিয়ে পৌরশহরের গোসাইকাচারী মাঠে তোলা হয় চড়ক গাছ। এরপর শুরু হয় মূল আকর্ষণ শরীরে বড়শি বিঁধিয়ে শূন্যে ঘোরা। যারা শরীরে বড়শি বিঁধিয়ে শূন্যে ঘোরেণ তাদের ‘হাজরা’ বলা হয়। আর বছরের পর বছর ধরে সেই ‘হাজরা’র কাজটি করে যাচ্ছেন স্থানীয় বীরেন সরকার। অপরদিকে পৌরশহরের স্যানালবাড়ীর মাঠ ও পৌর শিশুপার্কেও রোববার অনুরুপ চড়ক পূজার আয়োজন করা হয়।