মামলা হয়নি, গ্রেফতারও নেই

বগুড়ায় বিএনপি নেতা শাহীন খুন : এখনও মোটিভ জানতে পারেনি পুলিশ

দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪১৬ বার।

বগুড়ায় নিহত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনকে সোমবার সন্ধ্যার আগে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে বিকেল ৪টায় শহরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এবং বাদ আসর নিজ বাড়ি ধরমপুর খেলার মাঠে দু’টি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের ২০ ঘন্টা পরেও সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। পুলিশের একাধিক টিম তদন্ত করলেও কাউকে সনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবহন ব্যবসায়ী শাহীন হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু তারা খুঁজে পাচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বসহ তিনটি বিষয় তারা খতিয়ে দেখছেন। তবে স্বজন এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার রাতে বগুড়া শহরের উপ-শহর বাজারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন। বিএনপি নেতা মাহবুব আলম শাহীনকে যে স্থানে হত্যা করা হয়েছে সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ধরমপুর এলাকাতেই তার বাড়ি। তিনি ওই এলাকার মৃত আনিছুর রহমান দুলার ছেলে। 
সোমবার সকালে ময়না তদন্ত শেষে দুপুর ১২টার দিকে নিহত বিএনপি নেতা শাহীনের লাশ তার বাড়িতে নেওয়া হয়। ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) ফরেনসিক বিভাগে প্রভাষক তন্ময় বর্মণ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মাহবুব আলম শাহীনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার বুকে, পেটে এবং হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহবুব আলম শাহীনের এই হত্যাকাণ্ডের খবরে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত তার স্ত্রী আকতার জাহান শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে শাহীনের বৃদ্ধ মাকেও তার ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। এসব কারণে মামলা করতে দেরি হচ্ছে। নিহত শাহীনের সহকর্মী বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জানান, পরিবারের সদস্যরা সবাই শোকাহত। এজন্য কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তবে আজ (সোমবার) না হলেও কাল মামলা দায়ের করা হবে।
অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনের খুনীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ সোমবার দুপুরে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এর আগে জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট রেফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় আইনজীবী শাহীন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কোন সদস্যই আইন সহায়তা দিবে না।
এদিকে বিএনপি নেতা শাহীন হত্যার প্রতিবাদে দলের নেতা-কর্মীরা তিন দিনের জন্য কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। দলীয় কার্যালয়ে উড়ানো হয়েছে কালো পতাকা এবং দলীয় পতাকাও অর্ধনমিতকরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজার পূর্বে দেওয়া বক্তৃতায় জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ৩ দিনের শোক এবং ৪দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা শাহীনের খুনীদের যদি দ্রুত গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা চুড়ি পড়ে বসে থাকবো না।’ তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন না।’ এর আগে জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার বলেন, ‘এটা সবাই জানে মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধেই শাহীনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
নিহত মাহবুব আলম শাহীনের বড় ভাই ফেরদৌস রহমান অভিযোগ করেছেন, মোটর মালিক গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি জানান, মোটর মালিক গ্রুপের একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহন। শাহীন তার পক্ষে ছিল বলে অপর গ্রুপের লোকজন তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের দিনই শাহীনের একটি বাস বগুড়ার শেরপুরে আটকানো হয়। বিষয়টি জানার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, ৩ দিনের শোক পালনের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার শোক র‌্যালী, বুধবার প্রতিবাদ সভা, বৃহ্পতিবার মানবন্ধন এবং শনিবার স্মরণ সভা করা হবে। তিনি বলেন, ‘এর পরেও যদি খুনীদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে বগুড়াবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিজ্জামান জানান, তারা মোটর মালিক গ্রুপের বিরোধসহ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত বলার মতো উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি।’ বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে মোট ৬/৭ যুবক অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু তারা কারা সে সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’ ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজে কোন আলামত পাওয়া গেছে কি’না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যে ফুটেজ পেয়েছি তা ইফেক্টিভ নয়।’