বগুড়ায় বৈশাখী মেলার ৩য় দিনে মন কেড়েছে বায়োস্কোপ

অরুপ রতন শীল ও অসীম কুমার কৌশিক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৫৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১৮ বার।

লক্ষ কইর‍্যে দেখেন ভালো- এইবার বনের বাঘ আইলো, জমিদারের বাড়ি আইলো, খেয়াল কইর‍্যা দেখেন ভালো এক সাপের সাত মাথা আইলো, ধীরে ধীরে নজর করো গরুর গাড়ী চইল্যা আইলো... এমন নানা রকম ছন্দের বুলি শোনা যাচ্ছিলো পঁচাত্তর বছর বয়সী নিবাস আলীর মুখে। মঙ্গলবার বগুড়ার পৌর পার্কের বৈশাখী মেলার তৃতীয় দিনে নানা আয়োজনের মধ্যে দর্শকের মন কেড়েছে বায়োস্কোপ। 

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা নিবাস আলী ছন্দের তালে তালে বায়োস্কোপ দেখাচ্ছিলেন নানা বয়সী ছেলে-মেয়েদের।  বিশেষ করে শিশুদের ঝোঁক একটু বেশীই ছিলো বায়োস্কোপের প্রতি। প্রতিজন ১০ টাকার বিনিময়ে ঢাকনা খুলে বায়োস্কোপের মধ্যে তাকালেই দেখতে পাচ্ছেন যমুনার পাড়ে জমিদার বাড়ী, গরুর গাড়ী, বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, ফুলের বাগান, উড়জাহাজ,  পঙ্খীরাজ ঘোড়া, বাঘ, এক সাপের সাত মাথা এমন নানান বৈচিত্র্যময় সব চিত্র।

পাশেই ওস্তাদ আলাউদ্দিন মুক্ত মঞ্চে বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে চলছিলো নাটক। সুনীল জানার রচনায় ‘হবু গবুর পালা’ নাটকটিতে অভিনয় করছিলো এ কে আজাদ স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ নাটকের মাধ্যমে একজন মুর্খ্য রাজা অলসতায় কীভাবে তার রাজ্য শাসন করেন তা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর শুরু হয় মেলার আরেকটি আকর্ষণ মোরগ লড়াই।  দর্শকের করতালিতে দুটি মোরগের লড়াইয়ে বেশ উপভোগ্য হয়ে ঊঠেছিলো মেলা প্রাঙ্গণে। 
 

বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে বগুড়া থিয়েটারের উদ্যোগে প্রতি বছরের মত এবারও শহরের পৌর পার্কে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে  (১৯৮১ খ্রীস্টাব্দ) প্রথম শুরু হওয়া মেলাটি ইতিপূর্বে ৫দিন ধরে চললেও এবার  মেয়াদ একদিন বাড়িয়ে ৬দিন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মেলা প্রাঙ্গণে এবার ছোট-বড় ৪১টি স্টল বসেছে। এছাড়া মেলার ভেতরে-বাইরে খেলনা সামগ্রী, জুয়েলারি ও খাবারের আরও অর্ধশত দোকান বসেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধনের পর পরই লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

বায়োস্কোপ দেখানো নিবাস আলীর সাথে কথা বললে তিনি ‘পুণ্ড্রকথাকে ’  জানান, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গান্ধাইল ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে তার বাড়ি। দুই ভাই ও আট বোনের মধ্যে বড় সে। এই বায়োস্কোপ খেলা দেখিয়েই তিনি ৮ বোনের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাই কৃষি কাজ করে। স্ত্রী মালেকা খাতুন এবং দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রায় ১২৫ বছরের পুরনো এই বায়োস্কোপের বাক্স। আগে তার চাচা এটা দিয়ে খেলা দেখাতো। এখন তিনি বিভিন্ন গ্রাম, শহর, বন্দর এবং মেলা ঘুরে ঘুরে সবাইকে বায়স্কোপ খেলা দেখান। বায়োস্কপ খেলা দেখাতে বেশ মজা লাগে তার।  ১০ টাকার বিনিময়ে এই খেলা দেখালেও অনেকেই ধান, চালও দিয়ে থাকে।  

প্রতিদিন বাড়ী ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বায়োস্কোপ খেলা দেখাতে হয়। তাই দূরে কোথাও গেলে সেখানেই রাত কাটাতে হয়। এজন্য প্রতিদিন বাড়ী ফেরা সম্ভব হয় না তার। তবে যেদিন বাড়ী ফিরতে পারেন না সেদিন ফোন করে জানিয়ে দেন।  

তিনি আরো জানান, এখন আর এসব কেউ শিখতে চায় না। এটা ভেবে খুব কষ্ট হয় যে তার অবর্তমানে বায়স্কোপটি যেন পড়ে না থাকে। এই কাজে বেশ পরিশ্রম আছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে হয়। তবে পয়সাও আছে। আর আনন্দও আছে এই কাজে অনেক। তাইতো বাক্সটি নিয়ে ঘুরে বেড়াই বিভিন্ন জায়গায়।   

মায়ের সাথে মেলায় আসা বায়োস্কোপ দেখে আলিফ 'পুণ্ড্রকথাকে '  জানায়, সে পিটি আই মোড়ের মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের নার্সারি শ্রেণির ছাত্র। এর আগে কখনো সে বায়োস্কোপ দেখে নি। নামটাও জানতো না। বাক্সের মধ্যে হাতি ছানা, বাঘ, সাপ দেখে তার অনেক ভালো লেগেছে। একই স্কুলের তাসিন জানায়, সে গত বছর পৌরপার্কের বৈশাখী মেলায় এসেছিলো। তখন বায়োস্কোপ দেখেছিলো। তাই এবার মেলায় এসে চোখে পড়তেই সে মন ভরে বায়োস্কোপ খেলা দেখেছে। 

মায়ের সাথে মেলায় আসা নেটপ্রো কেজি স্কুলের সোহম 'পুণ্ড্রকথাকে ' জানায়, সে আগে কখনো বায়োস্কোপ দেখেনি। প্রথমবার দেখে খুব মজা লেগেছে। 

ঠনঠনিয়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির হাবিবা 'পুণ্ড্রকথাকে ' জানায়, খুব ভালো লেগেছে তার। এর আগে কখনো সে বায়োস্কোপ দেখেনে নি।