প্যারোলে মুক্তিতে রাজি নন বিএনপি প্রধান

সম্মান হারিয়ে রাজনীতি নয়, আমি তো দোষ করিনিঃ খালেদা জিয়া

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৮ বার।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে রাজি নন। দলের মহাসচিবসহ তিন নেতা কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘সম্মান হারিয়ে রাজনীতি নয়। আমি তো দোষ করিনি।’ আর সংসদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘সংসদে গিয়ে কী বলবে, আমার মুক্তির কথা?’ খবর প্রথম আলো অনলাইন।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ১৭ এপ্রিল প্রথম আলো জানায়, পহেলা বৈশাখের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেন। একপর্যায়ে তাঁর প্যারোলে মুক্তি এবং বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

প্রথম আলোর অনলাইনের খবরে আরও বলা হয়েছে, কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলছে যে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এর বিনিময়ে বিএনপির ছয়জন সাংসদ জাতীয় সংসদে শপথ নেবেন। গত কয়েক দিনে এই গুঞ্জন আরও বেড়েছে। এই গুঞ্জন জোরালো হওয়ার কারণ হচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার যে সময়সীমা আছে, তা ঘনিয়ে এসেছে। সে হিসেবে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিএনপির ছয় সাংসদকে শপথ নিতে হবে। অন্যথায় তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। এই গুঞ্জনে নতুন যুক্ত হয়েছে, মুক্তির পর দ্রুত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা গোপনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চেষ্টার এই গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি দলের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতার কথাবার্তায় তাঁদের মনে হয়েছে যে সমঝোতার মাধ্যমে হলেও তাঁরা খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আগ্রহী। এর পেছনে সরকারের কোনো মহলের যোগসূত্র থাকতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্যারোলে বা কোনো ধরনের সমঝোতায় তাঁর মুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী নন।

দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে দলে কারও ভিন্নমত নেই। সবাই চান, দ্রুত কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দিন। কিন্তু তাঁর মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায়, আন্দোলনের মাধ্যমে নাকি সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা করে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির যে সাংগঠনিক অবস্থা, তাতে আন্দোলন করে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার কথা দলের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় নেই। এ অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ চায়, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করা কিংবা প্যারোলে (নির্বাহী আদেশে) হলেও বের করে দেশে বা বিদেশে তাঁর চিকিৎসা করানো হোক। এ সমঝোতায় বিএনপির সাংসদেরা জাতীয় সংসদে যোগদান করতেও রাজি।

তবে দলের অপর একটি অংশ সমঝোতা করে খালেদা জিয়া কারামুক্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত নয়। তাঁরা মনে করেন, সরকারের অনুকম্পা নিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করা হবে অসম্মানের। এতে দল ও নেত্রীর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদিও এ বিষয়ে এই দুই চিন্তার নেতাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মতো একজন রাজনৈতিক নেত্রীর প্যারোলে মুক্তি নেওয়া অসম্মানজনক। তিনি নিয়মিত জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন এবং দেশে এ জাতীয় জামিনের বহু দৃষ্টান্ত আছে। তিনি বলেন, ‘সংসদে যাওয়া না-যাওয়ার যে গুঞ্জন আছে, সে ব্যাপারে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নই। তবে প্রাথমিকভাবে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে দল, ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।’