মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধেই খুন : পুলিশ সুপার

বগুড়ায় বিএনপি নেতা শাহীন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ২ ব্যক্তি গ্রেফতার

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৩২ বার।

বগুড়ায় বিএনপি নেতা ও পরিবহন ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এজাহারভুক্ত একজনসহ দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলোঃ শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকার মৃত কালু শেখের ছেলে পায়েল শেখ (৩৮) ও নিশিন্দারা মণ্ডলপাড়ার আবু তাহেরের ছেলে রাসেল (২৮)।


বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই আসামী গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে বলেন, জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। গ্রেফতার দুই আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ১০জন অংশ নিয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে রিমাণ্ডে নেওয়া হবে। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা গেলেও ধারালো অস্ত্রের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।


গত ১৪ এপ্রিল রোববার রাতে বগুড়া শহরের উপ-শহর বাজারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন। শহরের ধরমপুর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে শাহীন পরিবহন ব্যবসায়ী ছিলেন। এক সময় তিনি বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহবায়কও ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইন পেশায়ও যুক্ত ছিলেন।


নিহত শাহীনের স্ত্রী আকতার জাহান শিল্পী গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন। এতে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ ১০ জনকে আসামী করা হয়। এজাহারে তিনি তার স্বামীকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ কওের বলেন, এ বছর মোটর গ্রুপের নির্বাচনের ওপর উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হলে প্রধান আসামী আমিনুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হন। কয়েকদিন আগে শহরের চারমাথা এলাকায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিসের সামনে লোকজনের উপস্থিতিতে আমিনুল ইসলাম তার স্বামী শাহীনকে হত্যার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে। তিনি সেদিন সবার সামনে বলেছিলেন, ‘শাহীনকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমরা কোন কাজ-কর্ম করে সুবিধা করতে পারছি না।’


চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির খবর জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি বিএনপি শাহীন হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, ‘শাহীন মোটর মালিক গ্রুপের বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর মোটর মালিক গ্রুপের দায়িত্বশীল এক নেতার অফিসে গোপন বৈঠক করা হয়। সেখানে শাহীনকে নিষ্ক্রিয় (হত্যা) করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে মোটর মালিক গ্রুপের সেই নেতার সাথে তার সার্বক্ষণিক এক সহযোগী এবং চারমাথা এলাকার একজন ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিল। এছাড়া অফিস রুমের বাইরে আরও কয়েকজন অপেক্ষায় ছিল। তবে পুলিশ সুপার হত্যার পরিকল্পনাকারী মোটর মালিক গ্রুপের সেই নেতার নাম বলতে রাজি হননি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পরই তাদের একাধিক টিম মাঠে নামে। অভিযানের এক পর্যায়ে বুধবার ভোরে রাসেলকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেলসহ শহরের নিশিন্দারা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের আমলিচুকাই গ্রামে পায়েলকে  গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দুই আসামীর মধ্যে পায়েল এজাহারভুক্ত। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ৯টি মামলা রয়েছে।


পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল ও পায়েল হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। তারা বলেছে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঘটনার দিন ১৪ এপ্রিল রাতে মোটর মালিক গ্রুপের দায়িত্বশীল এক নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আরও একজন তাদের নিজস্ব লোকজনদের খবর দেয় এবং চারটি মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল উপ-শহর বাজারের এসে উপযুক্ত সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এরপর আগে থেকে উপ-শহর বাজারে অবস্থান করা এক ব্যক্তি শহরের চারমাথার সেই ফ্লেক্সি লোড ব্যবসায়ীকে মোবাইল ফোনে খবর দিলে পায়েল শেখ, রাসেল এবং আরও ৮/৯জন ঘটনাস্থলের কাছে চলে আসে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনকে উপুর্যপরি কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।


ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমবার হোসেন জানান, গ্রেফতার দুই আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমা- চাওয়া হবে। তিনি  বলেন, ‘বাকি আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’