ব্যবধান দেড় দশকের

বাবা লিয়াকতের মত ছেলে স্বর্গও গোলাগুলিতে প্রাণ হারালো

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৭৫ বার।

বগুড়ায় দুই দল সন্ত্রাসীর ‘গোলাগুলি’তে শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী রাফিদ আনাম ওরফে স্বর্গ (২৬) নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে উপশহর এলাকায় সুবিল খালের ওপর নির্মিত সেতুর কাছে ওই ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি ও বর্মিজ চাকু উদ্ধার করেছে। 
পুলিশ জানায়, নিহত স্বর্গ তাদের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিল। তার বিরুদ্ধে দু’ট হত্যাসহ মোট ৮টি মামলা ছিল। সে শহরের খান্দার শহীদনগর এলাকার মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে। তার বাবা লিয়াকত আলীও পেশাদার খুনি হিসেবে পরিচিত ছিল এবং ২০০৪ সালের ১০ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, একাধিক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হিসেবে ২০১৬ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক ছিল স্বর্গ। প্রায় এক মাস আগে সে জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। শাজাহানপুরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারপিট করে সে। 
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপশহর এলাকায় সুবিল খালের ওপর নির্মিত সেতুর কাছে দু’দল সন্ত্রাসী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এরপর পুিলশ সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে শহরের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ১রাউন্ড গুলি ও একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনতান চক্রবর্তী জানান, লাশের পরিচয় জানার জন্য অনুসন্ধানকালে জানা যায় তার নাম রাফিদ আনাম ওরফে স্বর্গ। তিনি বলেন, ‘স্বর্গের বিরুদ্ধে মোট ৭টি মামলা ছিল। এর মধ্যে একটি হত্যা, তিনটি চাঁদাবাজী ও ৩টি অস্ত্রের মামলা রয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
বাবার মতই ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে পরিচিত ছিল স্বর্গ
বগুড়া শহরের খান্দার শহীদ নগর এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত পেশাদার খুনি হিসেবে পরিচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা ছিল। কিন্তু কোন সাক্ষীই ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না বলে কোন মামলায় তার সাজা হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালে বগুড়া বোর্ডিংয়ের কাশেম হত্যা মামলায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু অল্পদিনেই সে জামিনে বেড়িয়ে আসে। তবে ২০০৪ সালের ১০ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে লিয়াকত নিহত হয়।
খান্দার শহীদ নগর এলাকাবাসী জানায়, বন্দুক যুদ্ধে বাবা লিয়াকত যখন নিহত হয় তখন স্বর্গের বয়স মাত্র ১০ বছর। তবে ওই বয়সেই সে তার বাবার ওই করুণ মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে পড়ালেখা ছেড়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে সে নিজেই একটি বাহিনী তৈরি করে। জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। 
প্রায় ৮ বছর আগে ২০১১ সালে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় প্রগ্রেস কোচিং সেন্টারে সে প্রথম হত্যাকা- ঘটায়। অভিযোগ রয়েছে, ওই কোচিং সেন্টারের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে এক পক্ষের ভাড়াটিয়া হিসেবে সে শরিফুল আলম নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে। তার এক বছরের মাথায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের ছাত্র নিরঞ্জন চক্রবর্তী দীপু হত্যাকাণ্ডেও তার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।