রোজগারের পথ যখন ২ মাথাওয়ালা গরু

জাকির আরেফিন শুভ
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৩৫ বার।

বগুড়ার পৌর পার্কে চলছে বৈশাখী মেলা। 
বিশেষ একটি খবর সংগ্রহের জন্য এসে দাড়ালাম মিলনায়তনের সামনে। লক্ষ্য পার্শ্বের ওই ছোট্ট তাবু। পড়ন্ত বিকেলের আলো আধারির মাঝে একধরনের গা ছমছমে পরিবেশ এখানে। দু’সেকেন্ড বিরতী দিয়ে এগিয়ে গেলাম তাবুর দিকে। বেশ নিশ্ছিদ্র তাবুটি। ভেতরটা আড়াল করার সব চেষ্টাই করেছে এরা। টিকেট কেটে সন্তর্পনে ঢুকে পড়লাম ভেতরে!
অবশেষে দেখতে পেলাম প্রকৃতির বেখেয়ালে জন্ম নেয়া অদ্ভুদ আকৃতির জোড়ামাথার সেই গরুটিকে। খড়ের আসনে বসে আছে। আমার মত আরও দর্শনার্থী আছে তাবুর ভেতর। গরুটির মাথা দুটি ও শিং চারটি। মূল মাথার সাথে তুলনামূলকভাবে ছোট একটি মাথা জোড়া লাগানো। তবে শরীরের অন্যান্য অংশের গঠন স্বাভাবিক।

তাবুর ভেতরেই পরিচয় হলো গরুর মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচল থানার দোগাছি গ্রামের ময়েন উদ্দিনের সাথে।
গরুটিকে দেখার একটা কৌতুহল আমার মধ্যেও ছিল। তবে তথ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরও অনেকটা সময়। মেলার কার্যক্রম শেষ করে ময়েন উদ্দিন যখন ফুরসৎ পেলো, তখন আমিও কথা বলার সুযোগ পেলাম।
গল্পে গল্পে সে জানালো, রাতের আধারে যখন গরুটির জন্ম হয় তখন তারা কিছুই বোঝেনি। সকাল বেলা গরুর জোড়ামাথা দেখে বাড়ীর সবাই অবাক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে খবর ছড়িয়ে পরে চারদিকে। দিন যত যায় ততই লোকজনের আসা-যাওয়া বাড়তে থাকে। দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন আসে গরু দেখতে। যাবার সময় কেউ কেউ আবার পাঁচ দশ টাকা বকশিসও দেয়। 
গরুর বদৌলতে আস্তে আস্তে এভাবেই বদলাতে শুরু করে ময়েনের ভাগ্যের চাকাও। 
ময়েনের স্কুল পড়ুয়া নাতি শিফাত আলী একসময় আদর করে গরুটির নাম দেয় রাজাবাবু। ময়েন জানায়, সেই রাজাবাবুর বয়স এখন চার।
রাজাবাবুকে প্রথম প্রদর্শন করা হয় তানোড় থাকার মুনমালা আড়ারবাজারের দুর্গাপূজার মেলায়। কিছুটা পরিচিতি পেয়ে যায় সেখানেই। তারপর রাজশাহী বিজিবি মেলায় ডাক পায়। তাও বছর তিনেক আগে। এরপর বিভিন্ন মেলায় রাজাবাবুকে ময়েন ভাড়ায় পাঠাতে শুরু করে। তবে ভাড়াটিয়ারা ঠিকভাবে টাকা না দেয়ায় রাজাবাবুকে নিয়ে ময়েন এখন নিজেই মেলায় অংশ নেয়। যতদিন মেলা চলে তাবুতেই পরিবার পরিজন নিয়ে নাওয়া-খাওয়া আর দিনশেষে তাবুর ভেতরেই ঘুমানোর কাজ সারতে হয় তাদের। 
ময়েন জানায়, সব খরচ বাদ দিয়ে মেলা শেষে তার ৭/৮ হাজার টাকা হাতে থাকে। বগুড়ায় আসার আগে সে জয়পুরহাট ও নওগাঁর বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলার সময় ছাড়া বাকী সময়ে সে দোগাছি গ্রামের স্বপ্নপল্লী পার্কে রাজাবাবুকে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেয়। আক্ষেপ করেই বলে সে, টিকেটের মূল্য ১০ টাকা চাইলেও কেউ কম দেয়, আবার কেউ দেয়ইনা।
রাজাবাবুর পরিচর্যার কাজ ময়েন নিজেই করে। খাবার তালিকায় আছে ভুসি, গুড়া, ঘাস ইত্যাদি।
রাজাবাবুকে কেনার জন্য অনেকেই তার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। গৃহস্থ থেকে শুরু করে সার্কাস পার্টির লোকজনও আছে সে তালিকায়। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। কিন্তু সে বেঁচেনি। একটা মায়া পড়ে গেছে গরুটার উপর। বিদায় বেলায় এ লেখনীর মাধ্যমে সরকারের কাছে আরজি জানায় ময়েন উদ্দিন, সরকার যদি চিড়িয়াখানায় প্রদর্শনের জন্য রাজাবাবুকে কিনে নিতে চায় তবে সে বেঁচে দিবে। কারণ রাজাবাবুকে অন্য কারও হাতে তুলে দিতে মন সায় দেয় না তার।