ত্বক ছাড়া জন্ম নেওয়া শিশুকে বাঁচাতে ডাক্তারদের লড়াই

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১২ বার।

প্রিসিলা ম্যালডোনাডো; চোখেমুখে প্রথমবারের মতো মা হওয়ার আনন্দের ঝিলিক। কিন্তু মুহূর্তেই ফিকে হয়ে গেল সে আনন্দ। জন্ম নেওয়া ছেলে বাচ্চাটির শরীরে যে ত্বক নেই!

২৫ বছর বয়সী ম্যালডোনাদোর জন্ম দেওয়া বাচ্চাটির নাম জাবারি। নিউ ইয়ারস ডেতে জন্ম নেওয়া ত্বকহীন বাচ্চাকে বাঁচাতে চলছে ডাক্তারদের লড়াই। কিন্তু তারা জানেন না এই চেষ্টার শেষ কোথায়।

জাবারির জন্মের মুহূর্তের বর্ণনা করতে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে ম্যালডোনাদো বলেন, ছেলের কান্নার কোমল স্বর শুনতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই যেন হাসপাতাল জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের নীরবতা। বাচ্চার স্বাস্থ্য কেমন, ওজন কতটুকু, কতটুকু লম্বা এই নিয়ে কেউই কিছু বলছিলেন না। এমনকি কেউই বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে আসছিল না; মায়ের বুকে রাখছিল না। এসবের বদলে ডাক্তার ও নার্সরা বাচ্চাকে মুড়িয়ে দেয় এবং দ্রুত রুম থেকে নিয়ে যায়।

“আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম; বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম।”

ঘণ্টা খানেক পরে সমস্যাটা জানতে পারেন বলে জানান ম্যালডোনাডো। টেক্সাসের সান আন্তোনিওর মেথোডিস্ট হসপিটালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ম্যালডোনাডো যখন তার ছেলে শিশুকে দেখছিলেন ডাক্তার-নার্সরা তখন তাকে ঘিরে রেখেছিলেন। বাচ্চার শরীরে যেসব জায়গায় ত্বক থাকার কথা সেসব জায়গায় ছিল ব্যান্ডেজ আর পাইপে মোড়ানো।

ম্যালডোনাডো বলেন, জাবারির কেবল মাথা ও দুই পায়ের কিছু অংশে একটু ত্বক ছিল। গলায়, বুক, পিঠ, দুই হাত ও পায়ের পাতায় কোনো ত্বক ছিল না। নবজাতকের চোখও দেখতে পারেননি বলে জানান ম্যালডোনাডো। কারণ চোখের পাতা ছিল জোড়া গালানো, বন্ধ।

“আমি করলাম তার কী সমস্যা- সে কী বাঁচবে। তারা (ডাক্তাররা) বললেন, তারা জানেন না। এমন সমস্যা নাকি তারা আর কখনও দেখেননি। আমি শূন্যতা বোধ করলাম।”

জাবারির বিরল রোগটার নাম আপলাসিয়া কুতিস কনজেনিতা। এটা জন্মগত একটা সমস্যা। এ সমস্যায় আক্রান্ত নবযাতকের গায়ে ত্বক থাকে না; কখনও মাথার খুলি ও হারেও সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা শরীরের অন্যান্য অংশের সঙ্গেও জড়িত থাকে।

ম্যালডোনাডো জানান, নবজাতককে বাড়ি নিয়ে যেতে এবং বাচ্চাটিকে স্বস্তিতে মরতে দিতে তাকে ও তার স্বামীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিস্থিতিটা খুবই কঠিন ছিল জানান এই মা।

গত সপ্তাহে জাবারিকে হিউস্টনের টেক্সাস চিলড্রেন’স হসপিটালে পাঠানো হয়। ম্যালডোনাডো জানিয়েছেন, তার ছেলে এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা (ইবি) রোগে আক্রান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এই রোগে আক্রান্তদের ত্বক খুবই নাজুক হয়। ছোট কোনো ইনজুরিতেই গায়ে ফোসকা ওঠে ও পানি জড়ে। রোগ নির্ধারণের জন্য বাচ্চার পাশাপাশি ম্যালডোনাডোকেও জেনেটিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

জাবারির চিকিৎসা নিয়ে মেথোডিস্ট হসপিটালের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “শিশু জাবারি ও তার পরিবারের জন্য এটা খুবই কঠিন একটি অভিযান বটে। তবে ব্যতিক্রম কিছু গবেষণা করা নিয়ে আমরাও ভাগ্যবান।...আমাদের ডাক্তার ও নার্সরা জাবারির যত্ন নিয়ে খুবই সচেতন। সে আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনায় সে থাকবে।”

তবে এ ব্যাপারে টেক্সাস চিলড্রেন হাসপাতালের কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।