ধারাবাহিক আলোচনা

রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) জীবনী-২ঃ ‘জানো হালিমা, তুমি এক প্রিয় বস্তু গ্রহণ করেছ’

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০৯ বার।

[মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী আমরা অনেকেই জানিনা, হয়তো কখনো পড়ারও সুযোগ হয়নি। এই অধমের মত এমনও অনেকে  আছেন যে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর জীবনী পড়ার জন্য বই কিনেছেন কিন্তু তা অনেক মোটা হওয়ায় অল্প কিছুদিন পড়ে সময়ের অভাবে অথবা অলসতার কারণে শেষ করতে পারেন নি। যেহেতু এখন প্রায় সবার হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে এবং দিনে অন্তত একবার হলেও অনলাইন ভিত্তিক পোর্টালে ঢুঁ মারেন। তো তাদের কথা চিন্তা করেইপুণ্ড্রকথা রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) -এর জীবনী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।

বলে রাখা ভাল, রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর এই জীবনীটি প্রথমা প্রকাশনের ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইবনে ইসহাকের লেখা গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন শহীদ আখন্দ। তিনি জানিয়েছেন, বইটির মূল লেখক ইবনে ইসহাকের জন্ম ৭০৪ খৃস্টাব্দে। ৬৩২ হিজরিতে মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ্‌ (সা.) এর ইন্তেকালের ৭২ বছর পরে। অর্থাৎ মহানবীর (সা.) ইন্তেকালের এক শতাব্দীর কাছাকাছি কোন সময়ে তাঁর এই জীবনী রচিত হয়। বাংলা ভাষায় এদেশে বইটি প্রথম প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।পাঠকদের সুবিধার্তে পরিসর ছোট করার জন্য বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠার বর্ণনা তুলে না ধরে কেবল গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই বেছে নেওয়া হয়েছে। - সম্পাদক]

 

আগের লেখা যেখানে শেষ হয়েছিল
আমরা [হালিমা- রাসুল্লাহ্ (সা.) এর দুধমাতা] মক্কায় পৌঁছেই দুগ্ধপুত্রের সন্ধানে তৎপর হলাম। রাসুলুল্লাহকে (সা.) গ্রহণ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো কিন্তু যে-ই সবাই শুনল তিনি এতিম, কেউ তাঁকে নিতে রাজি হলো না। কারণ, সবাই শিশুর মা-বাবার কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির আশায় ছিলেন।

পরের অংশ
আমরা বললাম, ‘এতিম! তাহলে তাঁর মা আর দাদু কী করবেন?’
তাঁকে এ জন্য আমরা কেউ নিতে আগ্রহী হলাম না। আমার সঙ্গে যত মেয়ে এসেছিলেন, সবাই একটা করে বাচ্চা পেয়ে গেলেন। পেলাম না শুধু আমি। অতএব, আমরা যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। আমার স্বামীকে আমি তখন বললাম, ‘আল্লাহ্র কসম! সব বন্ধুর সঙ্গে আমিও ফিরে যাব, সবার বাচ্চা থাকবে, আমার থাকবে না, তা হয় না। আমার ভালো লাগছে না। আমি বরং সেই এতিম বাচ্চাকেই নেব।’
তিনি বললেন, ‘তা-ই করো তবে। হয়তো তাঁর খাতিরেই আল্লাহ আমাদের বরকত দেবেন।’


আমি গিয়ে তাঁকে নিয়ে এলাম। তাঁকে নিলাম আর কাউকে পাইনি বলে। যেখানে মালপত্র রেখেছিলাম, ওখানে তাঁকে নিয়ে এলাম। তারপর যেই তাঁকে কোলে নিয়ে বুকে চেপে ধরলাম, সমস্ত বুক ভরে গেল দুধ এসে। বুক থেকে দুধ উপচে পড়ছিল আমার। পরম পরিতৃপ্তি ভরে তিনি সে দুধ পান করলেন, ঠা-া হলেন। কেবল তিনি নন, দুখ খেয়ে তাঁর দুধ ভাইয়েরও পেট ভরল। তারপর দুজনই ঘুমালেন। অথচ এর আগে আমার বাচ্চা একদম ঘুমাত না। আমার স্বামী উঠে উটের কাছে গেলেন। অবাক কা-! তার বাঁটভর্তি দুধ। দুধ দোহন করলেন স্বামী। আমরা দুজনে পেট ভরে তার দুধ খেয়ে সম্পূর্ণ তৃপ্ত হলাম। রাতে খুব ঘুম হলো আমাদের।
সকালে স্বামী বললেন ‘তুমি জানো হালিমা, তুমি এক প্রিয় বস্তু গ্রহণ করেছ?’
আমি বললাম, ‘আলহামদুল্লিাহ্! আমার তা-ই মনে হচ্ছে।’


আমরা রওনা হলাম। আমি তাঁকে নিয়ে আমার গাধার ওপর চড়ে বসলাম। গাধাটি এত বেগে দৌড়াচ্ছিল যে, অন্য গাধারা কিছুতেই তার সঙ্গে তাল দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। তখন আমার সঙ্গীরা বলল, ‘আরে, কী ব্যাপার! থামো, আমাদের নিয়ে যাও! যে গাধা নিয়ে রওনা হয়েছিলে তুমি, এটা সেই গাধাটা নয়?’
আমি জবাব দিলাম, ‘সেটাই তো।’
তারা বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ, একি তাজ্জাব ব্যাপার। নিশ্চয়ই আচানক কিছু একটা ঘটেছে।’ বনু সাদের দেশে আমাদের বাড়িতে এলাম আমরা। এত রুক্ষ উষর অনুর্বর দেশ আমি আর কোথাও দেখিনি।


তিনি [রাসুল (সা.)] যত দিন ছিলেন আমাদের সঙ্গে, আমাদের উটগুলো প্রচুর দুধ দিত। সেই দুধ দোহন করে আমরা পেট ভরে খেতাম। অথচ অন্যদের উট এক ফোঁটা দুধ দিত না। তাঁদের উটের বাঁটে তাঁরা কিছুই খুঁজে পেতেন না। আমাদের লোকজন তখন তাঁদের রাখালকে বলত, ‘কী মুশকিল! তোমরা আবু জু-আয়বের (হালিমা বাবা) মেয়ের রাখাল যেখানে যায়, সেখানে যাও না কেন?’
তা-ও তাঁরা গিয়ে দেখেছেন। তাঁদের উটের পাল ফিরে এসেছে পেটের ক্ষুধা পেটে নিয়ে। এক ফোঁটা দুধও তারা দিতে পারত না। অথচ আমার উটগুলোর দুধ ধরে রাখতে পারে না। দুই বছর যে এই দুধ আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত হয়েছিল, সে কথা কোনো দিন আমরা ভুলে থাকতাম না। দুই বছর পর তাঁকে স্তন্যদান বন্ধ করলাম।


তিনি [রাসুল (সা.)] বড় হচ্ছিলেন অন্য দশটা ছেলের মত নয়। একটু বিশেষ ধরনের। দুই বছর বয়সে বেশ সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর দেহের গঠন সুন্দর ছিল। তাঁকে আমরা নিয়ে এলাম তাঁর মায়ের কাছে। অথচ তাঁকে আমরা আমাদের কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ, তিনি আমাদের জন্য বরকত এনেছিলেন।
আমি তাঁর মাকে বললাম, ‘আমি চাই ছেলে বড় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুক। মক্কায় তো অসুখ-বিসুখের মহামারি লেগেই আছে। ওকে এখানে রাখতে আমার ভয় লাগে। ওকে আপনি আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে দিন।’
আমরা জেদ ধরলাম। জেদ দেখে তিনি রাজি হলেন। তাঁকে আমাদের সঙ্গে ফেরত যেতে দিলেন। 

(চলবে.. চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে)