বগুড়ার আলোচিত মতিন সরকার দুদকের মামলায় কারাগারে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৪৯ বার।

বগুড়ার আলোচিত বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং অর্জিত সেই সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় তিনি মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করেন। পরে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকারের নির্দেশে আব্দুল মতিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে ওই একই মামলায় এর দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ জানান, আদালতের সেই ক্রোক আদেশ এখনও বহাল রয়েছে। ফলে তিনি অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ অন্য কারও কাছে হস্তান্তর এবং ব্যাংকে রাখা অর্থ কারও কাছে স্থানান্তর করতে পারবেন না।
আব্দুল মতিন সরকার দেশজুড়ে আলোচিত কিশোরী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী বহিস্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের বড় ভাই। ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে তুফান সরকার ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। তার ১০দিন পর তুফানের স্ত্রীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ২৮ জুলাই ওই কিশোরী ও তার মাকে মারধরের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়। ওই ঘটনায় মামলার পর পুলিশ তুফান ও তার স্ত্রীসহ ১০জনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অন্য আসামীরা জামিনে বেড়িয়ে গেলেও তুফান সরকার এখনও কারাগারে আটক রয়েছেন।
মধ্যযুগীয় ওই নির্যাতনের খবর সেই সময় প্রায় সবগুলো গণমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। এর পর পরই শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর কমিটির আহবায়ক তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে তার বড় ভাই শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকারকেও বহিষ্কার করা হয়। দুদকের পক্ষ থেকেও দুই ভাইয়ের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ মতিন সরকার এবং ৭ মার্চ তুফান সরকারকে চিঠি দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। দুদকের নির্দেশনা অনুযায়ী মতিন সরকার ২৫ মার্চ এবং তার ভাই তুফান সরকার ২৭ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
এরপর তদন্তে নেমে দুদক মতিন সরকারের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এবং আরও প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার সম্পদ গোপনের প্রমাণ পায়। একইভাবে তার ছোট ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধেও অসাধু উপায়ে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন এবং আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদ গোপনের প্রমাণ মেলে। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাসের তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানায় আব্দুল মতিন সরকার ও তার ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। 
মামলাটি তদন্তের পর্যায়ে আসামী মতিন সরকারের নানামুখী তৎপরতায় দুদক কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন যে, তিনি তার অবৈধ সম্পদ অন্যত্র স্থানান্তর করতে পারেন। সেটা ঠেকাতে এবং তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ ককরার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন করা হয়। শুনানী শেষে আদালত গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। 
বগুড়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত মামলায় আব্দুল মতিন সরকার উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি মঙ্গলবার বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। তবে শুনানী শেষে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার তা নামঞ্জুর করে আব্দুল মতিন সরকারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।