শেরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই চরমপন্থী নিহত ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনায় মামলা : গ্রেফতার ১০

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৫৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮৯ বার।

বগুড়ার শেরপুরে দুইদল সন্ত্রাসীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা) দুই সদস্য নিহত ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  রোববার  থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান আতিক বাদি হয়ে হত্যাসহ অস্ত্র আইনে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ না করা হলেও অজ্ঞাত অনেককেই আসামি করা হয়েছে।  শুক্রবার (২৬এপ্রিল) দিনগত রাত অনুমান দেড়টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন গোবিন্দপুর ব্রিজ এলাকায় এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।


এদিকে গত ০৮এপ্রিল রাতে টহল পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা) দশজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৬এপ্রিল) রাত থেকে শুরু হয়ে গত শনিবার (২৭এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ৩৬ঘন্টা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের এই অভিযান পরিচালিত হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের দামুয়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুর রাজ্জাক (৪০), খিয়াল গ্রামের মৃত প্রফুল্ল দাসের ছেলে শ্রী দিলীপ চন্দ্র দাস (৪৬), একই উপজেলার সারাইল গ্রামের মৃত বানাত আলীর ছেলে ইসমাঈল হোসেন (৪৫) ও ইউসুফ আলী (৩৭), মৃত নাঈম উদ্দিনের ছেলে মজিবর রহমান (৪৬), তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের গুড় পিপুল গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে আল আমিন (২৮), খলিলুর রহমানের ছেলে শামীম হোসেন (২৮), মৃত হাসান আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ (২৭), মৃত নবাব আলী প্রামাণিকের ছেলে কামাল উদ্দিন (৫৫) ও তালম ইউনিয়নের হাঁড়িসোনা গ্রামের মেহের আলী আকন্দের ছেলে আবু সাঈদ (৬৫)।


শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী (পূর্ব বাংলার সর্বহারা) দলের সদস্য। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গত শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধৌ দিলীপ চন্দ্র দাস আদালতে টহল পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দী দিয়েছেন। এছাড়া বাকি সাতজনকে রোববার দুপুরের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।


উল্লেখ্য: ০৮এপ্রিল সোমবার দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে শেরপুর উপজেলায় টহল পুলিশের ওপর সশস্ত্র চরমপন্থী দলের হামলায় পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়া (৪২) গুলিবিদ্ধ হন। চরমপন্থীদের ছোঁড়া গুলি এই পুলিশ কর্মকর্তার ডান হাটতে বিদ্ধ হলে গুরুতর অবস্থায় রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তবে তাঁর ডান পা কেটে ফেলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই রাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়ার নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টহলদল প্রতিদিনের ন্যায় উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার এলাকায় নৈশ্যকালিন টহল দিচ্ছিলেন। তাদের টহল দলের গাড়িটি তখন ভবানীপুর মন্দির লাগোয়া রাস্তা হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলো। ঠিক সেই সময় চরমপন্থী দলের সদস্যরা ভবানীপুর বাজার এলাকায় পোস্টারিং করছিলো। এসময় টহল পুলিশের এই দলটি তাদের চ্যালেঞ্জ করলে চরমপন্থীরা গুলি ছোঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। চরমপন্থীদের গুলিতে ডান হাটুতে গুলিবিদ্ধ হন পুলিশ কর্মকর্তা নান্নু মিয়া। তবে সিএনজি অটোরিকশা চালক ও অপর দুই পুলিশ সদস্য অক্ষত থাকেন। এছাড়া গত ২৬এপ্রিল রাতে নিজেদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনায় দুই চরমপন্থী নিহত হন। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের অর্জনী গ্রামের মো. লিটন (৩৬) ও একই জেলার তাড়াশ উপজেলার পাইকড়া গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে মো. আফছার আলী (৪৫)। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র (১টি বিদেশী পিস্তল ও ১টি ওয়ান শুটার) ৮রাউন্ড গুলি, ২টি চাপাতি ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির হাতে লেখা ৩টি পোস্টার উদ্ধার করা হয়। আর নিহত দুই চরমপন্থীর মৃতদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।