কোরআন নাযিলের ইতিহাস-৮: মানুষের প্রতি দয়া-ভালোবাসার কারেণই তিনি বিশ্বনবী

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৩১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫২২ বার।

তায়েফে আশ্রয় নেয়া বাগানটির মালিকের দুই পুত্র রাসূল সা: -এর করুণ অবস্থা দেখে তাদের মনে সহানুভূতি জাগলো। তারা তাদের এক খ্রিষ্টান ক্রীতদাস আদাসের হাতে এক থোকা আংগুর দিয়ে বললো-ঐ লোকটিকে দিয়ে আসো। ক্রীতদাস আদাস আংগুরের থোকা রাসূল সা: -কে দিলো। রাসূল সা: বিসমিলাহ্ বলে হাত বাড়িয়ে খেতে শুরু করলেন। রাসূল সা: -কে বিসমিলাহ বলতে শুনে ক্রীতদাস আদাস বললো- এ অঞ্চলের লোকেরা তো এই বাক্য বলে না? রাসূল সা: আদাসকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কোথাকার অধিবাসী? তোমার দ্বীন কী? লোকটি উত্তর দিলো- আমি নিনোভার অধিবাসী এবং ঈসা আ: -এর দ্বীনের অনুসারী। হযরত মুহাম্মদ সা: বললেন, তুমি পুণ্যশীল বান্দা হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তার এলাকার অধিবাসী। আদাস বললো- আপনি ইউনুস ইবনে মাত্তাকে কিভাবে চেনেন? রাসূল সা: বললেন- তিনি ছিলেন আমার ভাই (সকল নবীরা পরস্পর ভাই স্বরূপ)। তিনি ছিলেন নবী, আমিও নবী। এ কথা শুনে আদাস রাসূল সা: -এর ওপর ঝুঁকে পড়ে তাঁর মাথা, হাত ও পায়ে চুম্বন করে। দূর থেকে এ অবস্থা দেখে বাগান মালিকের ঐ দুই পুত্র নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো, এ লোক এবার আমাদের ক্রীতদাসটির মাথা বিগড়ে দিয়েছে। মনিবের কাছে ফিরে গেলে বাগান মালিকের পুত্রদ্বয় ক্রীতদাস আদাসকে জিজ্ঞেস করলো- আরে, এ কি ব্যাপার? আদাস বললো, হে আমার মনিব! ভূ-পৃষ্ঠে এ লোকের (রাসূল সা:) চেয়ে ভালো আর কেউ নেই। তিনি আমাকে এমন এক কথা বলেছেন, যে কথা নবী ছাড়া অন্য কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। বাগান মালিকের ঐ পুত্রদ্বয় বললো, দেখো আদাস! এ লোকটি যেন তোমাকে তোমার দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়। কেননা তোমার দ্বীন এই লোকের দ্বীন থেকে ভালো।


এদিকে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর নবী করীম সা: ক্লান্ত দেহে বাগান থেকে বেরিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হোন। দুঃখ-দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে তিনি ছিলেন বিপর্যস্ত। চলতে চলতে তিনি ‘কারেন মানজেল’ নামক জায়গায় পৌঁছালেন। তপ্ত রোদে হাঁটার পর তিনি আকাশে একখন্ড মেঘের অস্তিত্ব অনুভব করলেন। তিনি কিছুটা স্বস্তি পেলেন। ভালোভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখলেন হযরত জিবরাঈল আ: দাঁড়িয়ে আছেন। শূন্য আকাশে দাঁড়িয়ে থাকা জিবরাঈল আ: নবীজিকে লক্ষ করে বললেন- আপনার কওম আপনাকে যা যা বলেছে ও করেছে আলাহ্ সবই শুনেছেন এবং দেখেছেন। এখন আলাহ্ আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেস্তাদের পাঠিয়েছেন। আপনি আপনার জাতির লোকদের ব্যাপারে পাহাড়ের ফেরেস্তাদের যা কিছু নির্দেশ দিবেন তাই তারা পালন করবে। এরপর পাহাড়ের ফেরেশতরা রাসূল সা: -কে ছালাম জানালো। তারা বললো- হে আলহর রাসূল এটাই কথা। আমাদেরকে নির্দেশ দিন। আপনি যদি চান তবে আমরা এই সুউচ্চ পাহাড়গুলো দ্বারা এদের সবাইকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো। দয়াল নবী এই কথা শুনে নিজ জাতির উপর আযাবের ভয়াবহতা কল্পনা করলেন। তিনি পাহাড়ের ফেরেশতাদের প্রস্তাবে না না করে উঠলেন। বরং তিনি বললেন- আমি আশা করি আলাহ্তায়ালা তাদের বংশধরদের মধ্যে থেকে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু এক আলাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। 


রাসূল সা: -এর এই জবাবের মধ্যে তাঁর অনুপম ব্যক্তিত্ব, বিচক্ষণতা, সীমাহীন অনুধাবন ক্ষমতা, মহানুভবতা, এবং মানুষের প্রতি গভীর দয়া-ভালোবাসার ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে তিনি মানবতার মুক্তির জন্যই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকলেন।

চলবে...