বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান, পাল্টা কমিটি হচ্ছে?

বগুড়ায় বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠিত: সাইফুল ও চাঁনই কর্তৃত্ব ধরে রাখলেন?

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫১৭ বার।

দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসা সাইফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন চাঁনই শেষ পর্যন্ত বগুড়া জেলা বিএনপিতে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখলেন। সোমবার দলের জেলা শাখার নির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনকে যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়।
এদিন দুপুরে সভা শেষে আহবায়ক কমিটি গঠনে জন্য গঠিত নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল জানান, সদস্যদের কাছ থেকে আহাবয়ক ও যুগ্ম আহবায়কের নাম প্রস্তাব করা হলে সাইফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন চাঁন ছাড়া আর কারও নাম কেউ প্রস্তাব করেননি। তাই ওই দু’জনকেই আহবায়ক এবং যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই দ্ইু নেতা আহবায়ক কমিটির বাকি সদস্যদের অন্তর্ভূক্ত করবেন এবং তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
তবে জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির ওই সাধারণ সভায় সাইফুল ইসলামের বিরোধীরা অনুপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, তারা সোমবার বিকেলে দলের সাবেক এক সাংসদের বাড়িতে পাল্টা একটি সভা ডেকেছেন। তবে সেখানে পাল্টা কোন কমিটি গঠন করা হবে কি’না সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কেউ আগাম মুখ খুলতে রাজি  হননি। যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা আলী আজগর হেনা বলেন, আহবায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেটি মানা হয়নি। তারেক রহমান বলেছেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মিলে সর্বসম্মতভাবে আহবায়ক কমিটির সদস্যদের নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করবে। কিন্তু সেটি না করে সাধারণ সভা ডেকে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার কোন এখতিয়ার জেলা সদস্যদের নেই। তাই আমরা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বসে তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
প্রায় ৮ বছর আগে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল বগুড়া জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন চাঁনকে যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তার প্রায় ৫ মাস পর ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির পুনর্গঠনের জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায়। এরপর সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল প্রতিনিধি সভা আহবান করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ্্ বুলু ও রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের উপস্থিতিতে ওই সভায় জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তবে সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে বগুড়া জেলা বিএনপিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হবেন না- এমন নেতাদেরকে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে বেছে নিতে বলা হয়। তাদের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করেন তৎকালীন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তখন তার দুই অনুসারী বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসানও দলের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তারা এ সময় কমিটি পুনর্গঠনে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নেরও দাবি জানান। 
তবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেদিরে ওই সভায় উপস্থিত সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তৎকালীন দলের বগুড়া জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং তার দুই অনুসারীর বক্তব্যের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে মত দিলে তুমুল বাকবিত-ার সৃষ্টি হয়। সাবেক সাংসদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ওইদিন বগুড়া জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে শো’জন এবং যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর পদ-পদবী স্থগিত করা হয়। 
পরে এখবর ছড়িয়ে পড়লে ওই তিন নেতার অনুসারী ২৫ এপ্রিল রাতেই বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরদিন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয়। অবশ্য প্রায় ২০ ঘন্টা পর ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় তৎকালীন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা খুলে দেন। এর একদিন পরই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে ২৯ এপ্রিল সোমবার দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাধারণ সভা ডাকা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, সোমবার অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির ৯৫জন উপস্থিত ছিলেন। তবে উপস্থিতি কম হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ১৭২জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৫০ আর দলের সঙ্গে নেই। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেকে বহিস্কৃত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয়ও হয়ে পড়েছন। এছাড়া কারাগারে আটক থাকার কারণেও অনেক সদস্য সভায় হাজির থাকতে পারেন নি। সভায় অনুপস্থিত নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা কখনো রাজপথে আন্দোলনে বিশ্বাসী নয়, নির্যাতন সহ্য করেননি, মামলা ও কারাভোগ করেন নি শুধু  ঘরে বসে রাজনীতি করতে চান তারা ছাড়াই বাকি সবাই ঐক্যবদ্ধ।’