পাল্টাপাল্টি আহবায়ক কমিটি গঠন

বগুড়ায় বিএনপিতে সাইফুল-চাঁনের বিপরীতে মাহবুব-বেলাল

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১৫ বার।

বগুড়ায় বিএনপির পাল্টা-পাল্টি আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টায় দলের জেলা কার্যালয়ে সাধারণ সভায় গঠিত ৪৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটির বিপরীতে সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় দলের সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাসভবনে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সভা করে ৩৫ সদস্যের পাল্টা আহবায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
দুপুরে জেলা কমিটির সভা থেকে বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনকে যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়। আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ডা.মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ওই কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।
আর সন্ধ্যায় পাল্টা সভায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানকে আহবায়ক এবং বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, আলী আজগর হেনা, মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ও ডা. শাহ্ মোহাম্মদ শাহ্জাহান আলীকে যুগ্ম আহবায়ক ঘোষণা করা হয়। তাদের নাম ঘোষণা করেন সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।
দুই পক্ষই সাংবাদিকদের কাছে নিজেদেরকে লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘প্রকৃত অনুসারী’ দাবি করে একে অন্যের বিরুদ্ধে তার নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগ এনেছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপির এই দ্বন্দ্ব-কোন্দল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত ছাত্রদল ও যুবদল মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে।
প্রায় ৮ বছর আগে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল বগুড়া জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন চাঁনকে যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তার প্রায় ৫ মাস পর ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির পুনর্গঠনের জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায়। এরপর সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল প্রতিনিধি সভা আহবান করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়।
সূত্র জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ্ বুলু ও রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের উপস্থিতিতে ওই সভায় জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তবে সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে বগুড়া জেলা বিএনপিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হবেন না- এমন নেতাদেরকে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে বেছে নিতে বলা হয়। একই সঙ্গে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করেই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে তাদের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করেন তৎকালীন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তখন তার দুই অনুসারী বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসানও দলের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেওয়া সিদ্ধান্তেরর বিরোধিতা করেন। তারা এ সময় কমিটি পুনর্গঠনে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নেরও দাবি জানান। 
তবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেদিরে ওই সভায় উপস্থিত সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তৎকালীন দলের বগুড়া জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং তার দুই অনুসারীর বক্তব্যের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে মত দিলে তুমুল বাকবিত-ার সৃষ্টি হয়। সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ওইদিন বগুড়া জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে শো’জন এবং যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর পদ-পদবী স্থগিত করা হয়। 
পরে এখবর ছড়িয়ে পড়লে ওই তিন নেতার অনুসারী ২৫ এপ্রিল রাতেই বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরদিন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয়। অবশ্য প্রায় ২০ ঘন্টা পর ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় তৎকালীন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা খুলে দেন। এর একদিন পরই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে ২৯ এপ্রিল সোমবার দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাধারণ সভা ডাকা হয়।
সোমবার দুপুরে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলের জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অনুপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে। পক্ষান্তরে সন্ধ্যায় শহরের সুত্রাপুরে সাবেক হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাসায় পাল্টা কমিটি ঘোষণার সময় ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদকসহ ওলামা দল, মৎসজীবী দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সভায়  ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটির মধ্যে হাজিরা খাতায় ৯৫জনের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে উপস্থিতি কম হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আহবায়ক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ১৭২জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৫০ আর দলের সঙ্গে নেই। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেকে বহিস্কৃত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয়ও হয়ে পড়েছন। এছাড়া কারাগারে আটক থাকার কারণেও অনেক সদস্য সভায় হাজির থাকতে পারেন নি।  সভায় অনুপস্থিত নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা কখনো রাজপথে আন্দোলনে বিশ্বাসী নয়, নির্যাতন সহ্য করেননি, মামলা ও কারাভোগ করেন নি শুধু  ঘরে বসে রাজনীতি করতে চান তারা ছাড়াই বাকি সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
পক্ষান্তরে পাল্টা আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে দলের সাবেক সাংসদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেন, আহবায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া সেটি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মানেনি। তিনি দাবি করেন, তারেক রহমান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মিলে সর্বসম্মতভাবে আহবায়ক কমিটির নির্দেশ দিলেও জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের মত করে আহবায়ক কমিটি করেছে। যার কোন এখতিয়ার জেলা সদস্যদের নেই। তাই আমরা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বসে তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটা আহবায়ক কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করেছি। কেন্দ্র অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হবে।’