কোরআন নাযিলের ইতিহাস-৯: জ্বিন জাতি কোরআনের প্রতি ঈমান আনলো

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১৩ বার।

তায়েফের ঘটনায় জিবরাঈল আ: এবং পাহাড়ের ফেরেস্তাদের পাঠানো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটা সাহায্য ছিলো। তায়েফবাসীর নিষ্ঠুর আচরণের জবাবে আসমানের ওপর থেকে আসা এই গায়েবী সাহায্যে রাসূল সা: -এর মন শান্ত হয়, দুঃখ-দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে যায়। অতপর তিনি মক্কার পথে যাত্রা শুরু করতে থাকেন। এরপর তিনি নাখালা নামক স্থানে থামেন। সেখানে তিনি কয়েকদিন কাটান। এখন মক্কায় কিভাবে ফেরত যাবেন? সেটাই ছিলো তখন তাঁর একমাত্র চিন্তা ও ভাবনা। কেননা তায়েফে যা কিছু হয়েছে এবং ঘটেছে সেটার সংবাদতো ইতিমধ্যেই মক্কায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন তো মক্কার কাফেররা আরো বেশি দুঃসাহসী হয়ে পড়বে। সে সময় দুর্ভাবনার মাঝেই একদিন রাতে রাসূল সা: কোরআন পাঠ করছিলেন। সে সময় জ্বিনদের একটি দল সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো। জ্বিনরা তাঁর কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পেলো এবং কোরআনের প্রতি ইমান আনলো এবং ফিরে গিয়ে নিজ জাতির মধ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করে দিলো। এরপরই আলাহ্তায়ালা প্রিয় নবীকে সুসংবাদ জানিয়ে দিলেন-
“(একবার) যখন একদল জ্বিনকে আমি তোমার কাছে পাঠিয়েছিলাম; তারা (তোমার) কোরআন (পাঠ) শুনেছিলো, যখন তারা সে স্থানে উপনীত হলো, তখন তারা বলতে লাগলো, সবাই চুপ হয়ে যাও, অতপর যখন (কোরআন পাঠের) কাজ শেষ হয়ে গেলো তখন তারা নিজের সম্প্রদায়ের কাছে (আলাহর আযাব থেকে) সতর্ককারী হিসাবেই ফিরে গেলো।” - সূরা আহকাফ: ২৯
“তারা বললো: হে আমাদের জাতি, আজ আমরা এমন এক গ্রন্থ (ও তার তেলোওয়াত) শুনে এসেছি, যা মুসার পরে নাযিল করা হয়েছে, (এ গ্রন্থ) আগের পাঠানো সব গ্রন্থের সত্যতা স্বীকার করে, এ (গ্রন্থটি) (সবাইকে) সত্য, অবিচল, ও সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে।” - সূরা আহকাফ: ৩০
“হে আমাদের জাতি, তোমরা সবাই মিলে আলাহ্র পথে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর (রাসূলের) ওপর ঈমান আনো, (তাহলে) আলাহ্তায়ালা তোমাদের গুনাহ খাতা ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দিবেন।” - সূরা আহকাফ: ৩১
জ্বিনদের আগমন ও ইসলাম গ্রহণ প্রকৃতপক্ষে আলাহ্র পক্ষ থেকে আরো একটি সাহায্য ছিলো। যখন তায়েফবাসী ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করলো তখন আলাহ্তায়ালা জ্বিনদের ইসলাম গ্রহণ করালেন। আলাহ্তায়ালা তাঁর সুরক্ষিত গায়েবী ভাণ্ডার থেকে এ সাহায্য করেছেন। জ্বিনদের ইসলাম গ্রহণের এই সুসংবাদের পর আলাহ্ পরের আয়াতে রাসূল সা: -কে উদ্দেশ্য করে আরো একটি সুসংবাদ দান করলেন-
“কেউ যদি আলাহ্র দিকে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া না দেয়, তবে সে পৃথিবীতে আলাহ্র অভিপ্রায় ব্যর্থ করতে পারবে না এবং আলাহ্ ছাড়া তাদের কোনো কর্ম সম্পাদক অভিভাবকও থাকবে না, তারাই সুস্পষ্ট  বিভ্রান্ততিতে রয়েছে। ” -সূরা আহকাফ: ৩২
আলাহ্র পক্ষ থেকে এসব সাহায্য ও সুসংবাদের ফলে রাসূল সা: -এর মনের ওপর ছেয়ে থাকা তায়েফের দুঃখ-কষ্ট এবং হতাশার সব মেঘ কেটে যায়। এবার আলাহ্র রাসূল সা: দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন যে, এখন তাঁকে মক্কায় ফিরে যেতে হবে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে দ্বীনের দাওয়াত এবং রেসালাতের তাবলীগে লেগে যেতে হবে। এসময় হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা রা: বললেন- ইয়া রাসূলাহ্! আপনি কি করে মক্কায় ফিরে যাবেন? মক্কার অধিবাসীরাতো সেখান থেকে আপনাকে বের করে দিয়েছে। রাসূল সা: বললেন- “হে যায়েদ! তুমি যে অবস্থা দেখছো, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আলাহ্তায়ালা অবশ্যই বের করে দিবেন। আলাহ্তায়ালা নিশ্চয় তাঁর দ্বীনের সাহায্য এবং তাঁর নবীকে জয়যুক্ত করবেন।” অত:পর রাসূল সা: নাখলা থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কার অদূরে হেরা পাহাড়ের পাদদেশে থেমে যান। সেখান থেকে তিনি খোযায়া গোত্র প্রধানের নিকট আশ্রয় চান এবং তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপর বনু আমর গোত্রের নিকট আশ্রয় চান, সেখানেও ব্যর্থ হোন। অবশেষে মোতয়েম ইবনে আদীর কাছে খবর পাঠান। মোতয়েম ইবনে আদী রাজী হয়। আদী তার লোকজনদের একত্রিত করে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে রাসূল সা: -কে নিরাপত্তা দেয়। রাসূল সা: হযরত যায়েদ ইবনে হারেস রা: -কে নিয়ে কাবা শরীফে প্রবেশ করেন। এরপর মোতয়েম ইবনে আদী নিজের সওয়ারীর উপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেয়- হে কুরাইশ লোকেরা শোনো, আমি মুহাম্মদ সা: -কে আশ্রয় দিয়েছি। কেউ যেন তাঁকে উত্যক্ত ও বিরক্ত না করে। এরপর রাসূল সা: হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেন এবং দু’রাকাত নামাজ আদায় করে তাঁর গৃহে ফিরে যান। এসময় মোতয়েম ইবনে আদির সন্তান ও লোকজন অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় রাসূল সা: -কে গৃহে পৌঁছে দেয়। চলবে...