কোরআন নাযিলের ইতিহাস-১০: আবু জেহেলেকে আল্লাহর ফেরেস্তা মেরে ফেলতে চাইলেন

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৯৬ বার।


প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আগে রাসূল সা: যখন ইসলামী পদ্ধতিতে কাবা ঘরে নামাজ শুরু করলেন তখন কুরাইশরা প্রথমবার অনুভব করলো মুহাম্মদ সা: নতুন কোনো দ্বীনের অনুসারী হয়েছেন। কাবার আশেপাশের লোকেরা অবাক চোখে সেই দৃশ্য দেখছিলো। ঘটনা সম্পর্কে  আবু জেহেল কুরাইশদের জিজ্ঞেস করে, মুহাম্মদ কি তোমাদের সামনে জমীনের উপর মুখ রাখছে? লোকেরা জবাব দেয়, হ্যাঁ। এ কথায় আবু জেহেলের জাহেলী শিরা-উপশিরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সে কসম কেটে বলে ওঠে- “লাত ও ওযযার কসম, যদি এভাবে তাকে আমি নামাজ পড়তে দেখি তাহলে তার ঘাড়ে পা রেখে দেবো এবং মাটিতে তার মুখ রগড়ে দেবো। অতঃপর সে রাসূল সা: -কে হুমকি দিলো এবং মক্কা শরীফের হারাম শরীফে নামাজ পড়তে নিষেধ করলো।  এমনকি আবু জেহেল তার সমর্থকদের  সংখ্যা অনেক বেশি বলে দম্ভ  প্রকাশ  করলো। 
একদিন রাসূল সা: মাকামে ইবরাহীমে নামায পড়ছিলেন। আবু জেহেল সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো। সে বললো, হে মুহাম্মদ, আমি কি তোমাকে এ থেকে নিষেধ করিনি? একথা বলে সে রাসূল সা: -কে ধমকাতে লাগলো। জবাবে রাসূল সা: আবু জেহেলকে কঠোরভাবে ধমকাতে লাগলেন। রাসূল সা: -এর ধমকানি শুনে সে বললো-“হে মুহাম্মদ, কিসের জোরে তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? এই উপত্যকায় আমার সমর্থকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
রাসূল সা: আবু জেহেলের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে নামাজ পড়তে থাকলেন। এরপর একদিন নবী সা: -কে নামাজ পড়তে দেখে, আবু জেহেল রাসূল সা: -এর ঘাড়ের উপর পা রাখতে এগিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ আবু জেহেল পেছনের দিকে সরে আসতে লাগলো। সে কোনো একটি জিনিস থেকে নিজের মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করতে লাগলো। এমনটা দেখে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি হয়েছে? সে বললো, আমার ও তার মাঝে আগুনের একটা গর্ত (পরিখা), একটি ভয়াবহ জিনিস ও কিছু ডানা দেখে আমি পেছনের দিকে সরে এসেছি। এ ঘটনা সম্পর্কে  রাসূল (সা:) বলেন-“ আবু জেহেল যদি আমার ধারে কাছে ঘেঁষতো তাহলে ফেরেস্তা তাঁকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতো। 
এই ঘটনায় আল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন-
“কখনোই নয়, মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে। কারণ সে নিজেকে দেখে অভাবমুক্ত। (অথচ) নিশ্চিতভাবেই তোমার রবের দিকেই ফিরে আসতে হবে। তুমি কি দেখেছ সেই ব্যক্তিকে যে এক বান্দাকে নিষেধ করে যখন সে নামাজ পড়ে? তুমি কি মনে করো, যদি (সেই বান্দা) সঠিক পথে থাকে অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়? তুমি কি মনে করো যদি (এই নিষেধকারী সত্যের প্রতি) মিথ্যা আরোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়? সে কি জানে না, আল্লাহ দেখছেন? যদি সে বিরত না হয় তাহলে আমি তার কপালের দিকের চুল ধরে তাকে টানবো, সেই কপালের চুল (ওয়ালা) যে মিথ্যুক এবং কঠোর অপরাধকারী। সে তার সমর্থক দলকে ডেকে নিক। আমিও ডেকে নিই আযাবের ফেরেশতাদেরকে। কখনোই নয়, তার কথা মেনে নিয়ো না, তুমি সিজদা করো এবং (তোমার রবের) নৈকট্য অর্জন করো।” -সূরা আলাক: ৬-১৯
[প্রথম ওহী সূরা আলাকের প্রথম অংশে ৫টি আয়াত নাযিল হয়। এরপর এই সূরার পরবর্তী অংশের ৬ থেকে ১৯ নং আয়াত এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়। ]

চলবে...