বিশ্বের যেসব দেশে নিকাব নিষিদ্ধ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মে ২০১৯ ০৭:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৩ বার।

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় অনেকে নিহত হয়েছে। জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনসমক্ষে মুখ ঢাকা বোরকা ও নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

শ্রীলংকায় আত্মঘাতী হামলায় ২৫০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পর শ্রীলংকা পুরো মুখ ঢেকে বাইরে বেরুনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার অফিস থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- জাতীয় নিরাপত্তার' স্বার্থে যে কোনো মুখ ঢাকা কাপড় যা চেহারা শনাক্ত করায় বাধা তৈরি করে তা এখন থেকে নিষিদ্ধ ।

এই নিষেধাজ্ঞার সমর্থকরা বলছেন, জননিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি ছিল এবং এর পরে দেশের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে মেলামেশা বাড়বে।

তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নিকাব নিষিদ্ধ মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্য, কারণ অনেক মুসলিম নিকাব ব্যবহারকে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা মনে করে।

বিশ্বের অনেক দেশে নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আসুন জেনে নেই বিশ্বের কোন কোন দেশে নিকাব নিষিদ্ধ-

ফ্রান্সঃ ২০১১ সালে ফ্রান্সে জনসমক্ষে নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। ফ্রান্সে নিকাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়। মামলা গড়ায় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ইউরোপীয় ওই আদালতও নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে।

ডেনমার্কঃ একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ডেনমার্ক। এ ব্যাপারে জারি করা এক আইনে বলা হয়- জনসমক্ষে এমন কোনো পোশাক যদি কেউ পরে যাতে তার মুখ পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায় তাহলে ১০০০ ক্রোনা (১৫৭ ডলার) জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার এই নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে ১০ গুণ বেশি জরিমানা গুনতে হবে।

ডেনমার্কঃ ডেনমার্কে ২০১৮ সালের জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের সেনেটে একটি আইন পাস করে সরকারি স্থাপনাগুলোতে (স্কুল, হাসপাতাল, গণপরিবহন) নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সেদেশে রাস্তায় নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়নি।

জার্মানিঃ জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় নিকাব পরা বেআইনি। জার্মানির সংসদে পাস করা একটি আইনে বিচারক, সরকারি কর্মচারী এবং সেনাবাহিনীতে নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া পরিচয় শনাক্ত করার প্রয়োজন হলে নিকাব সরানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বেলজিয়ামঃ বেলজিয়ামে ২০১১ সালের জুন মাসে পর্দা দিয়ে মুখমণ্ডল পুরোপুরি ঢাকা নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে। পার্ক বা রাস্তায় যে কোনো পোশাক যাতে মানুষের চেহারা ঢাকা পড়তে পারে তা নিষিদ্ধ করা হয়।

অস্ট্রিয়াঃ অস্ট্রিয়ায় স্কুল এবং আদালতসহ অনেক জায়গায় নিকাব নিষিদ্ধ করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে আইন পাস করা হয়।

নরওয়েঃ নরওয়েতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিকাব নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে।

বুলগেরিয়াঃ বুলগেরিয়াতে ২০১৬ সালে এক আইনে নিকাব পরার জন্য জরিমানার পাশাপাশি সরকারি কল্যাণ ভাতা কমিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লুক্সেমবুর্গঃ লুক্সেমবুর্গে হাসপাতাল, আদালত এবং সরকারি অফিস-আদালতসহ কিছু কিছু জায়গায় পুরোপুরি মুখ ঢেকে রাখার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে।

ইতালিঃ ইতালির কয়েকটি শহরে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন নোভারায় অভিবাসনবিরোধী দল নর্দার্ন লিগ ক্ষমতা নেয়ার পর ২০১০ সালে সেখানে নিকাব পরা নিষিদ্ধ করে।

স্পেনঃ স্পেনের বার্সিলোনা শহরে ২০১০ সাল থেকে কিছু কিছু জায়গায় (মিউনিসিপাল অফিসে, বাজারে, লাইব্রেরিতে) নিকাব পরা নিষিদ্ধ।

সুইজারল্যান্ডঃ সুইজারল্যান্ডে কিছু অঞ্চলেও জনসমক্ষে নিকাব পরা নিষিদ্ধ।

আফ্রিকাঃ শাদ, গ্যাবন, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ক্যামেরুনের উত্তরাঞ্চলে এবং নিজেরের ডিফা অঞ্চলে জনসমক্ষে নিকাব নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালে আফ্রিকার ওই অঞ্চলে নিকাব পরিহিত নারীরা পরপর কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা চালানোর পর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

আলজেরিয়াঃ আলজেরিয়ায় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে সরকারি কর্মচারীদের নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়।

চীনঃ চীনের উইগুর মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে জনসমক্ষে নিকাব এবং লম্বা দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ। খবর যুগান্তর অনলাইন।

সূত্র : বিবিসি