ভাড়াটিয়া খুনি নয়, বন্ধু-সহপাঠীরাই তাকে হত্যা করেছে

বগুড়া ক্যান্ট. কলেজের নাহিদ কিশোর বয়সে কথিত ‘প্রেম প্রেম খেলা’র বলি

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ মে ২০১৯ ১৮:২৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬০৪ বার।

কিশোর বয়সে কথিত ‘প্রেম প্রেম খেলা’র বলি হয়েছে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাজিউর রহমান নাহিদ (১৯)। ভাড়াটিয়া পেশাদার কোন খুনি নয়, নাহিদকে খুন করেছে তারই বন্ধু-সহপাঠীরা। মূল আসামী আরাফাত হোসেন নীরবকে (১৯) গ্রেফতারের পর পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া নীরবকে বুধবার বিকেলে নাটোর জেলার সিংড়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপরই সে পুলিশের কাছে নাহিদ হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছে।

নীরব পুলিশকে জানায়, সে, নাহিদ, রাকিব এবং অপর এক কিশোরী- এক সঙ্গে বোহাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এ সময় নীরবের সঙ্গে তাদের সেই বান্ধবীর ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু ওই চারজনের মধ্যে নাহিদ ও সেই  কিশোরী এইচএসসিতে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট ভর্তি হয়। এতে ওই কিশোরীর সঙ্গে নাহিদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখে নীরব। তার ভেতরে এই ধারণা জন্ম নেয় যে, একই কলেজে পড়ার সুবাদে নাহিদ তার প্রেমিকাকে ভাগিয়ে নিতে চাইছে। ব্যস! প্রথমে অন্যকে দিয়ে নাহিদকে হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় নাহিদকে খুনের পরিকল্পনা করে রাবিক। ওই হত্যাকাণ্ডে অপর বন্ধু-সহপাঠীদের সহায়তা নেয় সে। নীরব এতটাই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছিল যে, সে নিজেও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী হয়েও শুধু নাহিদকে হত্যা করবে বলেই ঘটনার দিন রসায়ন পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই বেড়িয়ে পড়েছিল।

বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ গত ২৭ এপ্রিল শনিবার দুপুরে পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর পরই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাহিদের এক সময়ের বন্ধু রবিউলকে আটক করে। পরে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পরদিন নিহত নাহিদের বাবা মতিউর রহমান মাস্টার বাদী হয়ে আটক রবিউলসহ ৮জনকে আসামী  করে মামলা দায়ের করেন। মামলার এহাজারে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পূর্বে আটক রবিউল ইসলাম ছাড়া আরও যে চারজনকে আসামী করা  হয়েছে তারা হলো- শাজাহানপুর উপজেলার বোহাইল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম মিলনের ছেলে রিয়াদ হাসান (২১), মোস্তাইল কানপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে আরাফাত হোসেন নীরব (১৯), ঘাসিড়া মধ্যপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রাকিব হাসান (২০) ও একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোটর সাইকেল মেকার সুমন মিয়া (২৫)। খুনীরা নাহিদকে হত্যার পর তার মোটর সাইকেলও ছিনিয়ে নেয়। পরে অবশ্য পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামী সুমন মিয়ার বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে। তবে অপর তিন আসামী রিয়াদ, সুমন ও রাবিক এখনও পলাতক।

শাজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দিন জানান, একই স্কুল থেকে এসএসসি পাশের পর নাহিদ এবং মেয়েটি ক্যান্টঃ পাবলিক কলেজে ভর্তি হলেও নীরব তুলনামূলক খারাপ রেজাল্টের কারণে দুবলাগাড়ি কলেজে ভর্তি হয়। একই কলেজে পড়ার কারণে নাহিদ এবং মেয়েটির ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে এবং তারা মাঝে মাঝে একই মোটরসাইকেলে কলেজে যাতায়াত করত। এ বিষয়টা নীরব কোনমতেই মেনে নিতে পারেনি এবং সে একাধিকবার নাহিদ এবং মেয়েটিকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে নীরব তার সহযোগী সুমন (মেকার) কে দিয়ে নাহিদের বাবার কাছে ফোন করে হুমকি প্রদান করেছিল। এ বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মীমাংসার চেষ্টাও করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন মূল ঘাতক নীরব রিয়াদ সুমন রবিউল রাকিবদের মিলে পরিকল্পনা করে যে নাহিদকে একটু ভালমতো শায়েস্তা করতে হবে। ঘটনার দিন ২৭ এপ্রিল নাহিদ এবং নীরব উভয়েরই রসায়ন দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নীরব পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই হল থেকে বের হয়ে সুমন মেকারের দোকান থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি যায়। এরপর সে কলেজ ড্রেস চেঞ্জ করে এবং একটি চাকু নিয়ে মোস্তাইল বাজার থেকে রিয়াদকে নিয়ে ঘটনাস্থল জোকা গ্রামের ইউনি ব্রাদার্স পোল্ট্রি ফার্মের নিকট অপেক্ষা করতে থাকে। নাহিদ তার এক বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেল বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় রিয়াদ সংকেত দিয়ে ওই মোটর সাইকেল থামায় ।এ সময় নীরব একটু দূরে ছিল। নাহিদ-রিয়াদের কথোপকথনের এক পর্যায়ে নীরব এসে দ্রুততার সাথে নাহিদের পেটের ভিতর চাকু ঢুকিয়ে দিয়ে দ্রুত উত্তরদিকে পালিয়ে যায়। নাহিদের সাথে থাকা বন্ধু তাকে দ্রুত উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই রবিউলকে আটক করা হয় এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলতে থাকে। অভিযানের ধারাবাহিকতায় বুধবার মূল আসামি নীবরকে নিখুঁত নাটোরের সিংড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।