কোরআন নাযিলের ইতিহাস-১২: ওহীর জ্ঞান ছাড়া মানব জীবন পূর্ণতা পেতে পারে না [২য় পর্ব ]

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ০২ মে ২০১৯ ১৮:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৭০ বার।

আমাদের চোখ, কান, ইত্যাদি ইন্দ্রিয় প্রয়োগ করে অনেক কিছু আমরা চিনতে বা বুঝতে পারি। আর বুদ্ধি প্রয়োগ করে মানুষ অনেক কলাকৌশল প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যেসব শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় শক্তি ও বুদ্ধি দ্বারা সমাধা করা যায় না। মানুষের মনের সকল প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার জবাব ইন্দ্রিয় শক্তি ও বুদ্ধিপ্রয়োগ করে পাওয়া যায় না। এর জন্য দরকার হয় ওহীর জ্ঞান। 
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন: একটি গরুকে চোখ দিয়ে দেখে আমরা বলে দিতে পারি, সেটা একটা গরু। আর বুদ্ধি প্রয়োগ করে আমরা বলতে পারি গরু উপকারী জন্তু এবং তা বিভিন্নভাবে মানুষের কাজে লাগে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় গরুর মাংস কিভাবে হালাল হবে। সেই প্রশ্নের উত্তর ইন্দ্রিয় শক্তি বা বুদ্ধি বলতে পারবে না। সেই প্রশ্নের উত্তর আসবে ওহীর জ্ঞানের আলোকে। আর সেই ওহী নির্দেশিত উত্তর হলো গরুটা হতে হবে জীবন্ত  এবং তা  আল্লাহ্র নাম নিয়ে জবাইকৃত হতে হবে। তবেই গরুটার মাংস হালাল।   
আরো একটি সামাজিক ও পারিবারিক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন- কোনো এক ব্যক্তির সামনে তার আপন বোনকে উপস্থিত করে বলা হলো বলুন তো ইনি কে? লোকটি চোখের ইন্দ্রিয় শক্তি দিয়ে চিনে ফেলে বলবেন ইনি আমার আপন বোন। অত:পর যদি জিজ্ঞেস করা হয় বলুনতো আপনার বোনের কী কী গুণাবালী রয়েছে এবং তাঁকে কোন কাজে লাগানো যেতে পারে? উত্তরে তিনি হয়তো বলবেন সে খুব মেধাবী ছাত্রী। তাঁকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানো যেতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তর তিনি বুদ্ধির সাহায্যে দিলেন। কিন্তু এবারে যদি তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার এই গুণবতী বোনকে আপনি কি বিবাহ করবেন? (নাউযুবিলল্লাহ্!) উত্তরে তিনি বলবেন নিশ্চয়ই নয়। এখানে তিনি যে উত্তরটি দিলেন তা ওহীর জ্ঞানের মাধ্যমে। ওহীর জ্ঞান যদি না থাকতো তাহলে তিনি হয়তো হ্যাঁ বলে ফেলতেন। তার এই ওহীর জ্ঞানটি বিবাহ বিষয়ক।  এ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলছেন-
“নারীদের মধ্য থেকে যাদের তোমাদের পিতা (পিতামহ)-রা বিয়ে করেছে তাদের তোমরা কখনো বিয়ে করো না, (হ্যাঁ এই নির্দেশ আসার) আগে যা হয়ে গেছে তা তো হয়েই গেছে, এটি (আসলেই) ছিলো এক অশ্লীল (নির্লজ্জ) কাজ এবং খুবই ঘৃণ্য ওি নিকৃষ্ট আচরণ।” -সূরা আন-নিসা-২২
“(বিয়ের জন্যে) তোমাদের ওপর হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুপু, তোমাদের খালা, ভাইদের মেয়ে, বোনদের মেয়ে (আরো হারাম করা হয়েছে) যেসব মা-যারা তোমাদের বুকের দুধ খাইয়েছে, তোমাদের দুধ (খাওয়ার সাথী) বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছো তাদের আগের স্বামীর ঔরসজাত মেয়েরা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে, (অবশ্য) যদি তাদের সাথে তোমাদের (শুধু বিয়ে হয়ে থাকে কিন্তু) তোমরা কখনো তাদের সাথে সহবাস করোনি, তাহলে (তাদের আগের স্বামীর মেয়েদের বিয়ে করায়) তোমাদের জন্যে কোনো দোষ নেই, (তোমাদের জন্যে) তোমাদের নিজেদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রীদের হারাম করা হয়েছে; (উপরন্তু বিয়ের জন্যে) তোমাদের ওপর দুই বোনকে একত্র করাও (হারাম করা হয়েছে), তবে যা কিছু এর আগে সংঘটিত হয়ে গেছে (তা তো হয়েই গেছে, সে ব্যাপারে) অবশ্যই আল্লাহ্তায়ালা বড়ই ক্ষমাশীল ও একান্ত দয়াবান।”- সূরা আন-নিসা-২৩
এই দুটি আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ওহীর জ্ঞান মানুষের বিবেক তৈরি করেছে, ভালো-মন্দ চিনতে শিখিয়েছে। এটাই ওহীর জ্ঞানের এক বিরাট চাহিদা, বিরাট দাবি। মানুষের পক্ষে ওহীর জ্ঞান অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ওহীর জ্ঞান ছাড়া শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে জীবনের পূর্ণতা আসবে না। চলবে...