ধারাবাহিক আলোচনা

রাসুলুল্লাহ্‌র (সা.) জীবনী-৪: আবিসিনীয় খ্রিস্টানরা শিশু মুহাম্মদকে দেখে বললেন ‘এর এক মহান ভবিষ্যৎ আছে’

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯ ০৬:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১২ বার।

[মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী আমরা অনেকেই জানিনা, হয়তো কখনো পড়ারও সুযোগ হয়নি। এই অধমের মত এমনও অনেকে  আছেন যে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর জীবনী পড়ার জন্য বই কিনেছেন কিন্তু তা অনেক মোটা হওয়ায় অল্প কিছুদিন পড়ে সময়ের অভাবে অথবা অলসতার কারণে শেষ করতে পারেন নি। যেহেতু এখন প্রায় সবার হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে এবং দিনে অন্তত একবার হলেও অনলাইন ভিত্তিক পোর্টালে ঢুঁ মারেন। তো তাদের কথা চিন্তা করেইপুণ্ড্রকথা রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) -এর জীবনী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।

বলে রাখা ভাল, রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর এই জীবনীটি প্রথমা প্রকাশনের ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইবনে ইসহাকের লেখা গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন শহীদ আখন্দ। তিনি জানিয়েছেন, বইটির মূল লেখক ইবনে ইসহাকের জন্ম ৭০৪ খৃস্টাব্দে। ৬৩২ হিজরিতে মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ্‌ (সা.) এর ইন্তেকালের ৭২ বছর পরে। অর্থাৎ মহানবীর (সা.) ইন্তেকালের এক শতাব্দীর কাছাকাছি কোন সময়ে তাঁর এই জীবনী রচিত হয়। বাংলা ভাষায় এদেশে বইটি প্রথম প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।পাঠকদের সুবিধার্তে পরিসর ছোট করার জন্য বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠার বর্ণনা তুলে না ধরে কেবল গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই বেছে নেওয়া হয়েছে। - সম্পাদক]

 

রাসুলুল্লাহর (সা.) জন্ম, তাঁর স্তন্য-পোষ্য শৈশব

আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রায় বলতেন, এমন কোন নবী নেই, যিনি মেষ চড়াননি। সবাই প্রশ্ন করত, ‘তাহলে আপনিও আল্লাহর নবী?’

তিনি বলতেন, ‘জি হ্যাঁ’।

আল্লাহর নবী (সা.) তাঁর সঙ্গীদের বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে ভাল আরব। আমি কোরাইশ বংশের মানুষ। আমি স্তন্যপান করেছি বন্ধু সাদ ইবনে বাকরদের সঙ্গে।’

কেউ কেউ অন্য একটা কথা বলেন। এর সত্য-মিথ্যা আল্লাহ্‌ জানেন। বলেন, তাঁর ধাত্রী-মা যখন তাঁকে মক্কায় তাঁর নিজের লোকের কাছে নিয়ে এলেন, তখন তিনি ভিড়ের মধ্যে তাঁর কাছ  থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন হালিমা, কিন্তু কোথাও তাঁকে পেলেন না। তখন তিনি গেলেন আবদুল মুত্তালিবের কাছে।

বললেন, ‘আজকে রাতে আমি মুহাম্মদকে নিয়ে এসেছিলাম। মক্কার উত্তর দিকে আমি ছিলাম। তখন কোথায় যে সে চলে গেল, তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

আবদুল মুত্তালিব গেলেন কাবাঘরে। প্রার্থনা করলেন তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।

তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ এবং অন্য একজন কোরাইশ তাঁকে পেয়ে আবদুল মুত্তালিবের কাছে নিয়ে এলেন। বললেন, ‘আমরা আপনার  এই ছেলেকে মক্কার উত্তর দিকে পেয়েছি।’

আবদুল মুত্তালিব তাঁকে কাঁধে নিলেন, সেই অবস্থায় তাওয়াফ করলেন কাবাঘর। আল্লাহর হেফাজতে তাঁকে দেওয়ার কথা বললেন, আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য প্রার্থনা করলেন। তারপর পাঠিয়ে দিলেন মা আমিনার কাছে।

একজন জ্ঞানী লোক আমাকে বলেছেন, তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার যে কারণ ধাত্রী-মা তাঁর মাকে বলেছিলেন, সেটা ছাড়া তাঁকে ফেরত দেওয়ার আরও কারণ ছিল।কিছু সংখ্যক আবিসিনীয় খ্রিস্টান স্তন্য ত্যাগ করার পর মক্কা থেকে ফিরিয়ে আনার পর তাঁকে দেখেন। তাঁরা তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। তাঁকে খুব গভীর মনোনিবেশসহ নিরীক্ষণ করলেন তারপর ধাত্রী-মাকে বললেন, ‘এই ছেলেকে আমাদের দেশে আমাদের রাজার কাছে নিয়ে যেতে দিন। এর এক মহান ভবিষ্যৎ আছে। এর সম্পর্কে আমরা সব জানি।’

যিনি আমাকে এসব কথা বলেছেন, তিনি আরও বলেছেন, ধাত্রী-মা কিছুতেই তাঁকে তাঁদের কাছ থেকে সরিয়ে আনতে পারছিলেন না।

(চলবে.. চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে)