কোরআন নাযিলের ইতিহাস-১৩: ওহীর জ্ঞান ছাড়া মানব জীবন পূর্ণতা পেতে পারে না [৩য় পর্ব]

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯ ১৪:৫৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৫৪ বার।

মানুষের ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধির প্রয়োগের বেলায় প্রত্যেকটির একটা সীমারেখা আছে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয় বুদ্ধি সেখানে কোনো কাজ করে না। আবার বুদ্ধির মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করতে হয় সেখানে ইন্দ্রিয় শক্তি কাজ করে না। 


একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যাক। আপনার চোখ বন্ধ অবস্থায় কেউ যদি বলে আপনার সামনে একটি বল পড়ে আছে, বলুনতো বলটি কি রঙের? এক্ষেত্রে চোখে না দেখে আপনি শুধু বুদ্ধি প্রয়োগ করে বলতে পারবেন না বলটির রঙের কথা। অনুরূপভাবে আপনাকে একটি আংটি দেখিয়ে বলা হলো বলুনতো এই আংটিটি আসল না নকল সোনার তৈরি? এক্ষেত্রে শুধু দর্শনের মাধ্যমে বলা সম্ভব নয় সেটি আসল না নকল। বরং বুদ্ধি প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে বলেতে হবে আসল না নকল। সূতরাং দেখা গেলো পঞ্চ ইন্দ্রিয় যে সীমারেখার কাজ করে সেখানে বুদ্ধির প্রয়োজন নাই, আবার যেখানে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যের সীমা শেষ হয়ে যায় সেখানে বুদ্ধির কার্যকারিতা শুরু হয়। 


তেমনিভাবে, মানুষের মনের অনন্ত প্রশ্নের উত্তর অনেক ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় অনুভূতির সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এই দুটিরই কার্যকারিতাও একটা জায়গায় শেষ হয় বা আটকে যায়। 


উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যাক। যদি বলা হয়, তোমরা কিভাবে দারিদ্র বিমোচন করবে? উত্তরে বলতে হবে  জাকাত  প্রদান করে।  আরো অগ্রসর হয়ে যদি বলা হয়,  জাকাত প্রদান করে  তোমার কী  লাভ ? এই প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধি খাটিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এখানে ওহীর জ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে। উত্তরে বলতে হবে গরীবের হক আদায় করলে আমার মাল হালাল হবে।


সূতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় অনুভূতির  সীমা সেখানে শেষ, সেখান থেকেই ওহীর কার্যকারিতা শুরু। ওহীর বিষয়বস্তুসমূহ বুদ্ধির মাপকাঠিতে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। আমাদেরকে দ্বীন ও আকিদার অনেক বিষয়ই ওহী জ্ঞানের দ্বারা বুঝতে হবে। ঈমান, দোযখ, বেহেস্ত, ফেরেস্তা, নবী-রাসূল ইত্যাদি সম্পর্কিত জ্ঞান আমরা ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছি। এই ওহী আল্লাহ্তায়ালা শুধুমাত্র তার মনোনীত বান্দাহর মাধ্যমে মানবজাতিকে প্রদান করেছেন। তাঁরা হলেন আম্বিয়া কিরাম, নবী-রাসূল। আর আল্লাহ্তায়ালা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর মাধ্যমে ওহী প্রদান পূর্ণ করেছেন এবং চিরতরে সমাপ্তিও করেছেন। যে ওহীর প্রথম কথা হলো- “পড়ো তোমার মালিকের নামে যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক-১)।” আর সর্বশেষ ওহীর কথা হলো- “সেদিনকে ভয় করো যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে (সূরা বাকারা-২৮১)।”

চলবে...