সর্বোচ্চ ২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে চারবার গতিপথ পাল্টেছে

‘ফণি’ বগুড়া অতিক্রম করেছে: গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৩২ কিলোমিটার

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ মে ২০১৯ ০৬:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৬৬ বার।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ অবশেষে শনিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বগুড়াসহ এ অঞ্চল অতিক্রম করেছে। বঙ্গপোসাগরে উৎপন্ন প্রবল শক্তিসম্পন্ন ‘ফণি’ শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বগুড়া অঞ্চলে পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। বগুড়ায় মাত্র এক মিনিটি স্থায়ী ওই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় মাত্র ৩২ কিলোমিটার। ফলে বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়া ছাড়া বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুুযায়ী, ভারতের ওডিশায় আঘাত হানার ২১ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ছয়টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। আরও উত্তর দিকে চলে গিয়ে সকাল নয়টার দিকে রাজবাড়ী জেলা ও আশপাশের অঞ্চলে অবস্থান করছিল। সমতল অঞ্চলে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে মেজাজি ফণিও দুর্বল হতে থাকবে এবং পরিণত হবে স্থল নিম্নচাপে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দিকে আসা গত দুই দশকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে ‘ফণি’। তারপরও শুক্রবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে শক্তি ও বাতাসের গতিবেগ খুব বেশি কমেনি।বিশ্বের আবহাওয়াবিষয়ক কয়েকটি সংস্থার পর্যবেক্ষণ এবং আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ১৫০০ ও ২০০৯ সালে আইলা প্রায় ৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে আঘাত হানে। আর ‘ফণি‘ ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার সকালে ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানে। শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখ ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে। সমুদ্রে প্রায় ২ হাজার ও ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ এ পর্যন্ত চার দফা গতিপথ বদলেছে। শুরুতে এটি ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্র প্রদেশ-তামিলনাড়ুর দিকে ছিল। পরে তা ওডিশার দিকে মোড় নেয়। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকে মুখ করে এগোতে থাকে। শুক্রবার সকালে তা দ্রুতগতিতে ওডিশার পুরিতে আছড়ে পড়ে। ভূমিতে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫কিলোমিটার।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) ও ঝড় পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ‘ফণি’ শনিবারের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড  অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্য হয়ে হিমালয়ে গিয়ে থামতে পারে। সেখানে বাধা পেয়ে এটি প্রবল বর্ষণ ঘটাবে। মেঘালয় ও বাংলাদেশের সিলেটে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে হাওর ও সিলেট এলাকায় হঠাৎ বন্যার আশঙ্কা আছে।


তবে ‘ফণি’ চলে গেলেও প্রকৃতিতে তার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। ফণি আঘাত হানার ২১ ঘন্টা আগে থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে। বরং ‘ফণি’ চলে যাওয়ার পর বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে শহরের অনেক এলাকার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মানুষের চলাচল কম হওয়ার কারণে নিত্যদিনের যানজটও নেই। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা বড়গোলায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও খোলেনি। তবে যেসব দোকান খোলা হয়েছে তাতে তেমন বেচা-কেনাও নেই। ঢেউটিন ব্যবসায়ী খোকন আহম্মেদ জানান, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। ফলে বেচাকেনাও নেই।


আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘন্টায় বগুড়ায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তার আগে ২২ ঘন্টায় অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শনিবার ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই হিসেবে গেল ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, ‘ফণি’র প্রভাবে শনিবার দিনভর বৃষ্টি হতে পারে।