সাইফুল-চাঁন ও মাহবুব-বেলালের পাল্টাপাল্টি কমিটি গ্রহণ করেনি কেন্দ্র

তারেক রহমানের নির্দেশে বগুড়ায় বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ মে ২০১৯ ১৪:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৪৪ বার।

বগুড়ায় বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষের গঠিত কোন ‘আহবায়ক কমিটি’ গ্রহণ করেনি কেন্দ্র। উল্টো ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শনিবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বিএনপি বগুড়া জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হল। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খুব শিগগিরই আহবায়ক কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বগুড়ায় দলটির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

বগুড়ায় বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষ গত ২৯ এপ্রিল বিএনপির ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট বগুড়া জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা দেন। এমনকি উভয় পক্ষই নিজেদের গঠন করা আহবায়ক কমিটির অনুমোদন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েও দিয়েছিলেন। অবশ্য কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তকে  এখন দুই পক্ষই স্বাগত জানিয়েছেন।
 গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে এক পক্ষের আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বিলুপ্ত বিএনপি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন। তাদের গঠিত ৪৫ সদস্যের কমিটির পাল্টা হিসেবে ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার বেলালের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্যের আরেকটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
প্রায় ৮ বছর আগে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল বগুড়া জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন চাঁনকে যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তার প্রায় ৫ মাস পর ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির পুনর্গঠনের জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও আভ্যন্তরীণ কোন্দলে তা ভেস্তে যায়। এরপর সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল প্রতিনিধি সভা আহবান করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়।
সূত্র জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ্ বুলু ও রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের উপস্থিতিতে ওই সভায় জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তবে সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে বগুড়া জেলা বিএনপিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হবেন না- এমন নেতাদেরকে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে বেছে নিতে বলা হয়। একই সঙ্গে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করেই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে তাদের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করেন তৎকালীন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তখন তার দুই অনুসারী বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসানও দলের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেওয়া সিদ্ধান্তেরর বিরোধিতা করেন। তারা এ সময় কমিটি পুনর্গঠনে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নেরও দাবি জানান। 
তবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেদিরে ওই সভায় উপস্থিত সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তৎকালীন দলের বগুড়া জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং তার দুই অনুসারীর বক্তব্যের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে মত দিলে তুমুল বাকবিত-ার সৃষ্টি হয়। সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ওইদিন বগুড়া জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে শো’জন এবং যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর পদ-পদবী স্থগিত করা হয়। 
পরে এখবর ছড়িয়ে পড়লে ওই তিন নেতার অনুসারী ২৫ এপ্রিল রাতেই বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরদিন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয়। অবশ্য প্রায় ২০ ঘন্টা পর ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় তৎকালীন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা খুলে দেন। 
তবে পাল্টাপাল্টি গঠন করা দু’টি আহবায়ক কমিটির কোনটিই গ্রহণ না করে উল্টো জেলা কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তকে বিবাদমান দুই পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে। বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশাকরি এতে দল উপকৃত হবে।’ অপর পক্ষের নেতৃত্বে থাকা বিলুপ্ত জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, ‘কেন্দ্র নিঃসন্দেহে একটি ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশাকরি আগামীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আহবায়ক কমিটি গঠনের  মাধ্যমে বিএনপি’র পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

এদিকে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দলটির তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন কেন্দ্রের এই হস্তক্ষেপ সময়পযোগী। দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আজিজার রহমান বলেন, ‘এখন কেন্দ্র যদি নতুন একটি কমিটি গঠন করে দেয় তাহলে দলটি সাংগঠনিক গতি পাবে।’ তবে গাবতলীর ফিরোজ নামে এক কর্মীর মতে  শুধু কমিটি বিলুপ্ত করলেই হবে না। তৃণমুলের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত কমিটি গঠন করতে হবে। তা না হলে অসন্তোষ আরও বাড়বে।