নওগাঁর আত্রাই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোল: মান্দায় হুমকির মুখে খেয়াঘাট স্কুল-মন্দির

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৯ ১০:৪৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯৪ বার।

নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর ভাটি অংশে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে একই স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় বিশাল এলাকাজুড়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি মন্দিরসহ সরকারি সম্পত্তিতে থাকা প্রাচীন দেবদারু বাগান। ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বেশকিছু ফসলী জমি।
এছাড়া চরম হুমকির মুখে রয়েছে বুড়িদহ খেয়াঘাটের বাঁশের সাঁকো। খুঁটি ব্যবহার করতে না পারায় ড্রামের ওপর ভাসিয়ে রাখা হয়েছে খেয়াঘাটের সাঁকোটির একাংশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ খেয়াঘাট দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ। ঘটনায় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। 
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, বাংলা ১৪২৬ সনে মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীয় ভাটিঅংশ আয়কর ভ্যাটসহ ৭৫ লাখ টাকায় ইজারা প্রদান করে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ বালুমহালের ইজারা নিয়েছেন নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকার মেসার্স তরফদার টেড্রার্সের স্বত্তাধিকারী  সাঈদ হাসান শাকিল। 
সরজমিনে দেখা গেছে, মান্দা উপজেলার ভাটি অংশে আত্রাই নদীর বুড়িদহ খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় একই স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে বালু উত্তোলনে করায় বিশাল এলাকাজুড়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই খেয়াঘাটে বাঁশের তৈরি সাঁকোর খুঁটি আর কাজে আসছে না। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। এ স্থান দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে নৌকায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন।  
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজারাদার নদীর তলদেশে ভরাট হওয়া বালু উত্তোলন করছেন না। নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে একইস্থান থেকে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করছেন। এতে ভূ-গর্ভস্থ স্তর ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে পাড় সংলগ্ন বেশকিছু ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী বুড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয় ভবনসহ ঐতিহ্যবাহী বুড়িমাতলা মন্দির ও সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাচীন দেবদারু বাগান। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাড় সংলগ্ন জমিসহ দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। 
খেয়াঘাটের পাটনি সনোজিৎ কুমার চৌধুরী জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে একইস্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় আমার খেয়াঘাটটি চরম হুমকিতে পড়েছে। এতে করে এ ঘাট দিয়ে এলাকার লোকজন পারাপার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তারা এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে অন্য খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথ দিয়েই স্কুল-কলেজে যাতায়াত করছে। 
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় ইজারাদারের লোকজন বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ মারপিটের হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে গত ৭ ই ফেব্রুয়ারি গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর করা হলেও আমরা কোন প্রতিকার পাইনি।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ ও ২০১১ সুত্রে জানা যায়, বালু উত্তোলন নীতিমালায় যন্ত্র চালিত মেশিন দিয়ে ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতু-কালভার্ট, রেললাইন, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা আইন সিদ্ধ নয় উল্লেখ থাকলেও আত্রাই নদীর এ অংশে তা মানা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইজারাদার সাঈদ হাসান শাকিলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, নীতিমালা লংঘন করে ইজারাদার বুড়িদহ খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজিং মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছেন এমন সংবাদে সেখানকার বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।