চলন্ত বাসে নার্সকে গণধর্ষণের পর হত্যা, পাঁচজন ৮ দিনের রিমান্ডে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ মে ২০১৯ ১৩:২৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৮ বার।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে (২৪) গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৫ জনের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের সুস্পষ্ট আলামত মিলেছে। খবর সমকাল অনলাইন 

বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৫ আসামিকে হাজির করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বাজিতপুর থানার ওসি (তদন্ত) সারোয়ার জাহান তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন সবকিছু শুনে গ্রেফতার ৫ জনের প্রত্যেকের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাসচালক নুরুজ্জামান নুরু, তার সহকারী লালন মিয়া, বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল, রফিকুল ইসলাম, খোকন মিয়া। এদের মধ্যে নুরুজ্জামান ও লালন মিয়া মামলার এজহারভুক্ত আসামি। অন্য তিনজন সন্দেহজনক আসামি। 

তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ছিলেন।পুলিশ জানায়, তানিয়াকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার গভীর রাতে থানায় মামলা হয়েছে। তানিয়ার বাবা মো. গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাজিতপুর থানায় মামলাটি করেন। মামলায়  স্বর্ণলতা পরিবহনের ওই বাসের চালক নুরুজ্জামান, হেলপার লালন মিয়া, আলামিন, আবদুল্লাহ আল মামুনকে এজহারভুক্ত এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। 

এদিকে ময়নাতদন্তে তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ময়নাতদন্তে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে আলামত পাওয়া গেছে।

গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে বাজিতপুরের পিরিজপুরগামী স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন শাহিনুর আক্তার তানিয়া। খবর পেয়ে কটিয়াদী থানা পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে বাসচালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালন মিয়াসহ পাঁচজনকে আটক করে। কিশোরগঞ্জের কোর্ট পরিদর্শক মো.তফিকুল ইসলাম তৌফিক সমকালকে জানান, গ্রেফতার পাঁচজনের ৮দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আগামী ১৫ মে তাদের রিমান্ড শেষ হবে। 

আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌস, অশোক সরকার এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সারোয়ার জাহান জানান, মামলা প্রাথমিক তদন্ত ও বিশ্লেষণে বোঝা যায়, বাসটি কটিয়াদীতে পৌঁছানোর পর অন্য যাত্রীরা নেমে গেলে তানিয়া একা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় চালক তার সহযোগীদের যাত্রী সাজিয়ে বাসে ওঠান। এরপর বাসটি কটিয়াদী থেকে পিরিজপুর যাওয়ার পথে সবাই মিলে শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণ করে। পরে তাকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এতে মাথা থেতলে যায় তার। বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকার ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকা তানিয়াকে দুই ব্যক্তি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার রাত পৌনে ১১টায় কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। 

এদিকে তানিয়াকে গণধর্ষণ ও হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে জেলা বিএমএ। জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ ওয়াহাব বাদল, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক আতিয়া হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া সমকাল সুহৃদ সমাবেশ কিশোরগঞ্জ জেলা, জেলা মহিলা পরিষদ বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় কালীবাড়িতে মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।